সাম্প্রতিক পোস্টসমূহ
loading..
Archive for 2014
# আল - ইয়াওমুল - আশুরা (সংকলন) শেষ পর্ব
১০ই মহররম বা ইয়াওমুল আশুরা-
পূর্বদিগন্তে ভোরের সূর্যের আবীর ছটায় রক্তিম আভা ধারণ করেছে । সূর্য ধীরে ধীরে উদিত হচ্ছে । তিন দিনের ক্ষুধা পিপাসায় কাতর, খোলা আকাশের নিচে তাঁবুর ভিতর উত্তপ্ত বালুকা রাশি, প্রখর রৌদ্র তাপে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত সদস্যদের হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ দিতে লাগলেন, জেহাদের ময়দানে ইবনে সা'দের নেতৃত্বাধীন ২০ হাজার এজিদ বাহিনীর মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিতে লাগলেন এবং অহেতুক রক্তপাত বন্ধের শেষ চেষ্টায় রত হয়ে ইবনে সা'দের সৈন্যদের নিকট তশরীফ নিলেন, এবং বলতে লাগলেন - "হে ইরাকবাসি, তোমরা নিশ্চয়ই জানো আমি তোমাদের রাসুলের দৌহিত্র, হযরত আলী আল মর্তুজা (কঃ)'র হৃদয়ের ধন, রাসুল তনয়া ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ)'র কলিজার টুকরা, ঈমাম হাসান (আঃ)'র ভাই । রক্তপাত হারাম, আমি তোমাদের এই গুনাহের কাজ হতে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছি । তোমরা তোমাদের শহরে যদি আমার এই আগমন না-ই পছন্দ কর তবে আমাকে ফিরে যেতে দাও । আমিতো তোমাদের কোন কিছুরই প্রত্যাশী নই, তবে তোমরা কেন আমার জানের প্রত্যাশী ? তোমরা আমার রক্তের বিনিময়ে কি করে বড়লোক হবে, ধনবান হবে ? কাল-হাশরের দিন আমার এই রক্তের তোমরা কি জবাব দিবে ? তোমাদের কাজের পরিণতির কথা তোমরা একবার ভাবো । নিজের পরিণাম চিন্তা করো, একবার ভাবো আমি কে, কার নূর-এ-নাযার এবং কাদের সন্তান ? আমার মা ঐ রাসুল তনয়া ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ), যিনি হাসরের দিন পুল-সিরাত পার হওয়াকালিন আল্লাহপাক বলবেন - 'হে আহলে মাহশর বা হাশরবাসী তোমাদের মাথা নত করো এবং চোখ বন্ধ করো, কেননা খাতুন এ জান্নাত ৭০ হাজার হুরসহ এখন পুল-সেরাত পার হবেন ।' আমি ঐ ব্যাক্তি যার প্রতি মহব্বতকে আমার নানাজান রাসুলে খোদা (দঃ) তাঁরই প্রতি মহব্বত বলে ব্যক্ত করেছেন । তোমরাই আমাকে পত্র মারফত দাওয়াত দিয়ে এখানে ডেকে এনেছো আর আজ তোমরাই আমার রক্ত পিপাসু হলে ?" কুফাবাসি তাদের প্রেরিত দাওয়াত পত্রের কথা সম্পুর্ন অস্বীকার করলে এবং হযরত মিথ্যা বলেছেন বললে তিনি বুঝতে পারলেন তাঁর এই প্রচেষ্টা বৃথাই হলো, কোন ফল হলো না । তিনি তথাপি শেষবারের মত কুফাবাসির প্রতি বললেন - "তোমাদের কি রাসুল এ খোদা (দঃ)'র বানীর কথা স্মরণ নেই যে, আমি বেহেশতের সকল যুবকদের সর্দার; আমি কি তোমাদের নবীর দৌহিত্র নই ? তোমরা যাবের বিন আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞেস করো, জিজ্ঞেস করো আবু সাইয়ীদ খুদরীকে, আনেস-বিন-মালেককে ।" এতদ শ্রবণে কায়েস-আশআত বলে উঠলো - "তুমি কেন বনি আমেরের কথা মেনে নিচ্ছ না অর্থাৎ এজিদের আনুগত্য স্বীকার করছো না ?" তিনি (হযরত) বললেন - "খোদার কসম, আমি পথভ্রষ্টের মত তার হাতে হাত দিব না, গোলামের মতো কখনও তার দাসত্ব স্বীকার করবো না ।" অবশেষে ইবনে সা'দের নেতৃত্বে এজিদের বাহিনী ঈমামের সাথে জেহাদে অবতীর্ন হলো । সর্ব প্রথম হযরত হুর (রাঃ) বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে বহু শত্রু সৈন্য কতল করে শাহাদাত বরণ করলেন । এরপর জেহাদে অবতির্ন হলেন আঠারো বছরের যুবক ওহাব - বিন - আব্দুল্লাহ, যিনি তাঁর মাতার আদেশে ময়দানে যাত্রার পূর্বে স্ত্রী হতে অনুমতি নিতে গেলে তরুণী স্ত্রী বললেন - 'আলহামদুলিল্লাহ আমার এতে কোনো আপত্তি নেই; তবে একটি শর্ত বা অনুরোধ যখন আপনি শাহাদাত বরণ করে বেহেশতে প্রবেশ করতে যাবেন, তখন কিন্তু আমাকে ছাড়া প্রবেশ করবেননা ।' হোলও তাই, দেখা গেল তাঁর শাহাদাত বরণের পর তাঁর দ্বিখণ্ডিত মস্তক পাপিষ্ঠরা তাঁবুতে ছুড়ে মারলে তাঁর স্ত্রী ঐ রক্তমাখা দ্বিখণ্ডিত মস্তক কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে এক সময় তারই উপর ঝুঁকে পড়ে চিরনিদ্রায় নিদ্রিত হলেন এবং স্বামীর সাথে বেহেশতে প্রবেশ করলেন । এমনিভাবে একের পর এক বীর ঈমাম সদস্যবৃন্দ বীরত্বের সাথে জেহাদ করে ইবনে সা'দ ও সীমারের অসংখ্য সৈন্য কতল করে শাহাদাত বরণ করতে লাগলেন । ঈমাম পরিবার ভিন্ন যখন আর একজনও অবশিষ্ট রইলেন না তখন ঈমাম তনয় ১৭ বৎসরের যুবক হযরত আলী আকবর (রাঃ) যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হয়ে পিতার অনুমতি নিয়ে সর্ব প্রথম ময়দানে উপস্থিত হয়ে বললেন - "আমি হোসাইন বিন আলীর পুত্র, আল্লাহর কসম, আমি রাসুল এ খোদার ঘনিষ্টতম সম্পর্কের অধিকারী ।" ইবনে সা'দ তাঁকে আসতে দেখে বিচলিত হয়ে সিমারকে জিজ্ঞেস করলো - "ইনি কে ? এঁর চেহারাতো চন্দ্র হতে অধিক উজ্জ্বল ।" সীমার বললো - "ইনি হোসাইন বিন আলীর পুত্র ।" শত্রু পক্ষের কেহই যখন তাঁর সামনে আসতে সাহস পেলো না, তিনি তখন তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং একের পর এক শত্রুসৈন্যকে কতল করতে করতে সম্মুখে অগ্রসর হতে লাগলেন । কমপক্ষে ৫০০ শত্রুসেনা খতম করার পর পিপাসায় কাতর হয়ে তাঁবুতে ফিরে এসে হযরত হোসাইন (আঃ) কে বললেন - "আব্বাজান, পিপাসায় আমি অন্ধকার দেখছি ।" হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) তাঁকে সান্তনা দিয়ে বললেন - "বৎস, তোমার প্রপিতামহ রাসুলে খোদা (সাঃ) হাউজে কাউসারের শরবত নিয়ে তোমার অপেক্ষায় আছেন ।" এতদশ্রবনে তিনি আবার ঘোড়া ছুটিয়ে ময়দানে ফিরে গেলেন । দুশমনদের মাথার উপর তাঁর তলোয়ার বিদ্যুতের ন্যায় চমকাতে লাগলো । শত্রুর তীর ও নেজার আঘাতে তাঁর দেহ মোবারক ক্ষত-বিক্ষত হতে লাগলো, এমনি এক সময় তিনি একটু থামলে তাঁর পিছন হতে মর্দন-বিন-মনকাছের নেজার আঘাতে তিনি ধরাশায়ী হলেন । হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) ঘোড়া ছুটিয়ে এসে দেখলেন তাঁর প্রানের ধনকে দুশমনেরা ইতিমধ্যে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে । তিনি খণ্ডিত দেহ মোবারককে একত্রিত করে তাঁবুতে নিয়ে গেলেন । লাশ মোবারক দেখে সবাই ক্রন্দনে ভেঙ্গে পড়লেন । এমনিভাবে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মোসলেম, হযরত কাসেম বিন হাসান, হযরত আব্বাস, জয়নবের দুই পুত্র আউন এবং মোহাম্মদ প্রমুখ আওলাদ ও ফরজন্দে ঈমাম হোসাইন (আঃ) বীরত্বের সাথে জেহাদ করে একের পর এক শাহাদাত বরণ করতে লাগলেন । এক সময় তাঁবুর মধ্য হতে ক্রন্দনের আওয়াজ ভেসে এলে তিনি তাঁবুর ভিতরে প্রবেশ করে দেখেন দুগ্ধপোষ্য শিশু আসগর যার বয়স মাত্র ৬ মাস, নিদারুণ পিপাসায় ছটফট করছেন । হযরত জয়নব কেঁদে উঠে বললেন - "ভাইয়া, সকল দুঃখ-কষ্টই সহ্য করা যায়, কিন্তু এ দৃশ্য সহ্য করা যায় না।" হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ) বললেন - "একে আমার কাছে দাও, হয়তো এই বাচ্চার প্রতি কারও দয়া হতে পারে।"
শিশু আসগর (রাঃ) কে কোলে নিয়ে তাঁবুর বাইরে এসে বললেন - "হে কুফাবাসি, এ দুগ্ধপোষ্য শিশু তোমাদের কোনই ক্ষতি করেনি, অন্ততঃ এই শিশুটিকে এক চুমুক পানি দাও।" কিন্তু পানির পরিবর্তে এক পাষণ্ডের তীর এসে শিশু আসগর (রাঃ)'র গন্ডাদেশ চিড়ে হযরত হোসাইন (আঃ)'র বাহুবিদ্ধ করলো। তিনি বেদনাকাতর নয়নে আকাশপানে একবার তাকালেন এবং তীর বের করে ছুড়ে ফেলে দিলেন। শিশু আসগর (রাঃ)'র গন্ডাদেশ হতে রক্তের ধারা প্রবাহিত হতে লাগলো। তিনি এক কোশ রক্ত নিয়ে আকাশের দিকে ছুড়ে মাড়লেন এবং বললেন - "হে আল্লাহ তুমি যদি খুশি থাকো তাহলে এক আলী আসগর কেনো, এমনি হাজারো আলী আসগর তোমার রাস্তায় একে একে কোরবান করতে থাকবো।" এমনিভাবে একের পর এক ঈমাম পরিবার শাহাদাত বরণ করতে করতে পুরুষবর্গের মধ্যে একমাত্র শাহজাদা হযরত জয়নাল আবেদিন (রাঃ) এবং হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ)-ই অবশিষ্ট রইলেন। অসুস্থতার জন্য হযরত জয়নাল আবেদিন (রাঃ) কে জেহাদে শরীক হতে বারন করে হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) নিজেই ময়দানে যাত্রার জন্য তৈরি হতে লাগলেন। ময়দানে সে কি করুন দৃশ্য! শহীদানদের রক্তে রঙ্গিন কারবালার জমিন, ভাই ভাতিজা সন্তান এবং অন্যান্য শহীদগণ খণ্ডিত-দ্বিখণ্ডিত দেহ মোবারক নিয়ে রক্তের চাঁদরে মুখ ঢেকে ময়দানের এখানে সেখানে পড়ে আছেন, আশার প্রদিপ নিভে গেছে, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অস্ত্র হাতে নিয়ে ঘোড়ায় সাওয়ার হয়ে শত্রু সেনাদের সামনে হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) বলতে লাগলেন - "হে জালেমগণ খোদাকে ভয় করো, যদি তোমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করে থাকো আমার নানাজান সাইয়েদুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (দঃ)'র প্রতি ঈমান এনে থাক; কেয়ামতের দিনের বিচারকে বিশ্বাস করে থাক তাহলে আমার নানাজান সাইয়েদুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) যিনি সকল গুনাহগারের শাফায়েতকারি; সকল মুসলমান যার শাফায়েতের প্রত্যাশি; তাঁর কাছে অন্যায় ভাবে আমাদেরকে হত্যার, এই রক্তপাতের কি জবাব দিবে ? তোমরাতো আমার পরিবার ও প্রিয়জনদের সকলকে শহিদ করেছো। এখনতো শুধু বাকি আছি আমি, যদি সিংহাসন বা রাজত্বই আমার প্রতি তোমাদের এই আক্রশের মূল কারন হয়ে থাকে, তাহলে আমাকে আরব ছেড়ে দুনিয়ার অন্যত্র চলে যেতে দাও। অন্যথা আমি আল্লাহর মর্জির উপরে সবর এখতিয়ার করে তাঁর হুকুম পালনে ব্রত হবো।" হযরতের এই বাণী শুনে অনেক কুফাবাসিরই চোখে অশ্রু দেখা দিল। ইবনে সা'দ এতদ দর্শনে ভিত হয়ে বলতে লাগলো - "আপনি কাহিনী সংক্ষিপ্ত করুন, ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের কাছে এজিদের বশ্যতা স্বীকার করুন অন্যথা যুদ্ধে অবতীর্ন হওয়া ছাড়া আপনার আর কোন গতি নেই।" হযরত বললেন - "অন্যায়ের পূজারীর হাতে ন্যায়ের পূজারী কি করে আত্মসমর্পন করতে পারে ?" অবশেষে ইবনে সা'দ ও সিমারের নেতৃত্বাধীনে এজিদবাহিনী নিঃসঙ্গ ও পরিশ্রান্ত শাহাজাদার প্রতি হামলা চালাতে তৈরি হলো। এজিদ বাহিনীর বাছাই করা শ্রেষ্ঠ সৈন্যগণ একে একে তাঁর সহিত সম্মুখ সমরে অগ্রসর হলে তিনি তলোয়ারের একই আঘাতে তাদেরকে ধরাশায়ী করে বীরবিক্রমে ফোরাতকূলে উপস্থিত হলে সা'দ ও সীমার তাদের পরিণামের কথা চিন্তা করে প্রমোদ গুনতে লাগলো। সীমার চিৎকার করে বলতে লাগলো - "হে সৈন্যদল, সাবধান! হোসাইন বিন আলী এক কাতরা পানিও যেন পান করতে না পারে, তাহলে আমাদের একজনও জীবন নিয়ে কারবালা ত্যাগ করতে পারবে না।" হযরত হোসাইন (আঃ) ফোরাতে নেমে যেই না আঁজল ভরে পানি উঠালেন অমনি হযরতের দন্ত মোবারক লক্ষ করে হাসিন-বিন-নমির নামক এক নরাধম-পাষন্ড তীর ছুঁড়ল, তীরের আঘাতে তাঁর দন্ত মোবারক হতে রক্তের ধারা প্রবাহিত হতে লাগলো; আঁজলের পানি রক্তে রঙ্গিন হলো। তিনি ঐ রক্তমাখা পানি আসমানের দিকে ছুঁড়ে মারলেন। ইবনে সা'দ ও সীমার যখন বুঝতে পারলো যে, এমনিধারায় যুদ্ধ চললে তাদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী তখন চারিদিক হতে একযোগে আক্রমন চালাতে এবং হযরতের উপর তীরের বর্ষন করতে নির্দেশ দেয়া হলো। চতুর্দিক হতে নিক্ষিপ্ত হাজার হাজার তীরের আঘাতে হযরতের ওযুদ মোবারক ক্ষত-বিক্ষত হতে লাগলো, নূরময় দেহ রক্তে রঙ্গিন হতে লাগলো। তথাপি তিনি বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে যেতে লাগলেন। এমনি সময়ে সেনান-বিন-আনেছ, খুলি-বিন-এজিদকে হযরতের গর্দান মোবারক দ্বিখণ্ডিত করার আদেশ দিলে সে সম্মুখে অগ্রসর হলো বটে, কিন্তু তাঁর গর্দান মোবারক লক্ষ্য করে তলোয়ার তুলতে সাহস করলো না। তখন সেনান-বিন-আনেছ স্বয়ং ঘোড়া ছুটিয়ে হযরতের সামনে এসে ঘোড়া থেকে নামলো এবং তলোয়ার দ্বারা হযরতের শির মোবারক ওযুদ মোবারক হতে আলাদা করে ফেললো। (ইন্না-লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন) অর্থাৎ তিনি শাহাদাত বরণ করলেন।
সমস্ত আকাশ মুহূর্তের মধ্যে রক্তবর্ন ধারণ করলো, চতুর্দিক গভীর তমসাচ্ছন্ন হলো, কিছুক্ষন পর তমসা কেটে গেলো, আকাশ হতে রক্তের বারিধারা বর্ষিত হতে লাগলো। এমনি করে কারবালা প্রান্তরের মর্মান্তিক ইতিহাস সংঘটিত হলো।
সত্য ও ন্যায়ের ঝান্ডা উড্ডয়নের জন্য, লক্ষ লক্ষ ভক্তপ্রান উম্মতে মোহাম্মদীর নাজাতের জন্য, ইসলামের বুনিয়াদকে সুদৃঢ় ও চিরস্থায়ি করার জন্য ঈমাম হোসাইন (আঃ) এবং তাঁর পরিবারবর্গ একে একে কারবালা-প্রান্তে শাহাদাত বরণ করলেন, কিন্তু এজিদের হাতে হাত রেখে বশ্যতা স্বীকার করলেন না।
পূর্বদিগন্তে ভোরের সূর্যের আবীর ছটায় রক্তিম আভা ধারণ করেছে । সূর্য ধীরে ধীরে উদিত হচ্ছে । তিন দিনের ক্ষুধা পিপাসায় কাতর, খোলা আকাশের নিচে তাঁবুর ভিতর উত্তপ্ত বালুকা রাশি, প্রখর রৌদ্র তাপে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত সদস্যদের হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ দিতে লাগলেন, জেহাদের ময়দানে ইবনে সা'দের নেতৃত্বাধীন ২০ হাজার এজিদ বাহিনীর মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিতে লাগলেন এবং অহেতুক রক্তপাত বন্ধের শেষ চেষ্টায় রত হয়ে ইবনে সা'দের সৈন্যদের নিকট তশরীফ নিলেন, এবং বলতে লাগলেন - "হে ইরাকবাসি, তোমরা নিশ্চয়ই জানো আমি তোমাদের রাসুলের দৌহিত্র, হযরত আলী আল মর্তুজা (কঃ)'র হৃদয়ের ধন, রাসুল তনয়া ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ)'র কলিজার টুকরা, ঈমাম হাসান (আঃ)'র ভাই । রক্তপাত হারাম, আমি তোমাদের এই গুনাহের কাজ হতে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছি । তোমরা তোমাদের শহরে যদি আমার এই আগমন না-ই পছন্দ কর তবে আমাকে ফিরে যেতে দাও । আমিতো তোমাদের কোন কিছুরই প্রত্যাশী নই, তবে তোমরা কেন আমার জানের প্রত্যাশী ? তোমরা আমার রক্তের বিনিময়ে কি করে বড়লোক হবে, ধনবান হবে ? কাল-হাশরের দিন আমার এই রক্তের তোমরা কি জবাব দিবে ? তোমাদের কাজের পরিণতির কথা তোমরা একবার ভাবো । নিজের পরিণাম চিন্তা করো, একবার ভাবো আমি কে, কার নূর-এ-নাযার এবং কাদের সন্তান ? আমার মা ঐ রাসুল তনয়া ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ), যিনি হাসরের দিন পুল-সিরাত পার হওয়াকালিন আল্লাহপাক বলবেন - 'হে আহলে মাহশর বা হাশরবাসী তোমাদের মাথা নত করো এবং চোখ বন্ধ করো, কেননা খাতুন এ জান্নাত ৭০ হাজার হুরসহ এখন পুল-সেরাত পার হবেন ।' আমি ঐ ব্যাক্তি যার প্রতি মহব্বতকে আমার নানাজান রাসুলে খোদা (দঃ) তাঁরই প্রতি মহব্বত বলে ব্যক্ত করেছেন । তোমরাই আমাকে পত্র মারফত দাওয়াত দিয়ে এখানে ডেকে এনেছো আর আজ তোমরাই আমার রক্ত পিপাসু হলে ?" কুফাবাসি তাদের প্রেরিত দাওয়াত পত্রের কথা সম্পুর্ন অস্বীকার করলে এবং হযরত মিথ্যা বলেছেন বললে তিনি বুঝতে পারলেন তাঁর এই প্রচেষ্টা বৃথাই হলো, কোন ফল হলো না । তিনি তথাপি শেষবারের মত কুফাবাসির প্রতি বললেন - "তোমাদের কি রাসুল এ খোদা (দঃ)'র বানীর কথা স্মরণ নেই যে, আমি বেহেশতের সকল যুবকদের সর্দার; আমি কি তোমাদের নবীর দৌহিত্র নই ? তোমরা যাবের বিন আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞেস করো, জিজ্ঞেস করো আবু সাইয়ীদ খুদরীকে, আনেস-বিন-মালেককে ।" এতদ শ্রবণে কায়েস-আশআত বলে উঠলো - "তুমি কেন বনি আমেরের কথা মেনে নিচ্ছ না অর্থাৎ এজিদের আনুগত্য স্বীকার করছো না ?" তিনি (হযরত) বললেন - "খোদার কসম, আমি পথভ্রষ্টের মত তার হাতে হাত দিব না, গোলামের মতো কখনও তার দাসত্ব স্বীকার করবো না ।" অবশেষে ইবনে সা'দের নেতৃত্বে এজিদের বাহিনী ঈমামের সাথে জেহাদে অবতীর্ন হলো । সর্ব প্রথম হযরত হুর (রাঃ) বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে বহু শত্রু সৈন্য কতল করে শাহাদাত বরণ করলেন । এরপর জেহাদে অবতির্ন হলেন আঠারো বছরের যুবক ওহাব - বিন - আব্দুল্লাহ, যিনি তাঁর মাতার আদেশে ময়দানে যাত্রার পূর্বে স্ত্রী হতে অনুমতি নিতে গেলে তরুণী স্ত্রী বললেন - 'আলহামদুলিল্লাহ আমার এতে কোনো আপত্তি নেই; তবে একটি শর্ত বা অনুরোধ যখন আপনি শাহাদাত বরণ করে বেহেশতে প্রবেশ করতে যাবেন, তখন কিন্তু আমাকে ছাড়া প্রবেশ করবেননা ।' হোলও তাই, দেখা গেল তাঁর শাহাদাত বরণের পর তাঁর দ্বিখণ্ডিত মস্তক পাপিষ্ঠরা তাঁবুতে ছুড়ে মারলে তাঁর স্ত্রী ঐ রক্তমাখা দ্বিখণ্ডিত মস্তক কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে এক সময় তারই উপর ঝুঁকে পড়ে চিরনিদ্রায় নিদ্রিত হলেন এবং স্বামীর সাথে বেহেশতে প্রবেশ করলেন । এমনিভাবে একের পর এক বীর ঈমাম সদস্যবৃন্দ বীরত্বের সাথে জেহাদ করে ইবনে সা'দ ও সীমারের অসংখ্য সৈন্য কতল করে শাহাদাত বরণ করতে লাগলেন । ঈমাম পরিবার ভিন্ন যখন আর একজনও অবশিষ্ট রইলেন না তখন ঈমাম তনয় ১৭ বৎসরের যুবক হযরত আলী আকবর (রাঃ) যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হয়ে পিতার অনুমতি নিয়ে সর্ব প্রথম ময়দানে উপস্থিত হয়ে বললেন - "আমি হোসাইন বিন আলীর পুত্র, আল্লাহর কসম, আমি রাসুল এ খোদার ঘনিষ্টতম সম্পর্কের অধিকারী ।" ইবনে সা'দ তাঁকে আসতে দেখে বিচলিত হয়ে সিমারকে জিজ্ঞেস করলো - "ইনি কে ? এঁর চেহারাতো চন্দ্র হতে অধিক উজ্জ্বল ।" সীমার বললো - "ইনি হোসাইন বিন আলীর পুত্র ।" শত্রু পক্ষের কেহই যখন তাঁর সামনে আসতে সাহস পেলো না, তিনি তখন তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং একের পর এক শত্রুসৈন্যকে কতল করতে করতে সম্মুখে অগ্রসর হতে লাগলেন । কমপক্ষে ৫০০ শত্রুসেনা খতম করার পর পিপাসায় কাতর হয়ে তাঁবুতে ফিরে এসে হযরত হোসাইন (আঃ) কে বললেন - "আব্বাজান, পিপাসায় আমি অন্ধকার দেখছি ।" হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) তাঁকে সান্তনা দিয়ে বললেন - "বৎস, তোমার প্রপিতামহ রাসুলে খোদা (সাঃ) হাউজে কাউসারের শরবত নিয়ে তোমার অপেক্ষায় আছেন ।" এতদশ্রবনে তিনি আবার ঘোড়া ছুটিয়ে ময়দানে ফিরে গেলেন । দুশমনদের মাথার উপর তাঁর তলোয়ার বিদ্যুতের ন্যায় চমকাতে লাগলো । শত্রুর তীর ও নেজার আঘাতে তাঁর দেহ মোবারক ক্ষত-বিক্ষত হতে লাগলো, এমনি এক সময় তিনি একটু থামলে তাঁর পিছন হতে মর্দন-বিন-মনকাছের নেজার আঘাতে তিনি ধরাশায়ী হলেন । হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) ঘোড়া ছুটিয়ে এসে দেখলেন তাঁর প্রানের ধনকে দুশমনেরা ইতিমধ্যে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে । তিনি খণ্ডিত দেহ মোবারককে একত্রিত করে তাঁবুতে নিয়ে গেলেন । লাশ মোবারক দেখে সবাই ক্রন্দনে ভেঙ্গে পড়লেন । এমনিভাবে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মোসলেম, হযরত কাসেম বিন হাসান, হযরত আব্বাস, জয়নবের দুই পুত্র আউন এবং মোহাম্মদ প্রমুখ আওলাদ ও ফরজন্দে ঈমাম হোসাইন (আঃ) বীরত্বের সাথে জেহাদ করে একের পর এক শাহাদাত বরণ করতে লাগলেন । এক সময় তাঁবুর মধ্য হতে ক্রন্দনের আওয়াজ ভেসে এলে তিনি তাঁবুর ভিতরে প্রবেশ করে দেখেন দুগ্ধপোষ্য শিশু আসগর যার বয়স মাত্র ৬ মাস, নিদারুণ পিপাসায় ছটফট করছেন । হযরত জয়নব কেঁদে উঠে বললেন - "ভাইয়া, সকল দুঃখ-কষ্টই সহ্য করা যায়, কিন্তু এ দৃশ্য সহ্য করা যায় না।" হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ) বললেন - "একে আমার কাছে দাও, হয়তো এই বাচ্চার প্রতি কারও দয়া হতে পারে।"
শিশু আসগর (রাঃ) কে কোলে নিয়ে তাঁবুর বাইরে এসে বললেন - "হে কুফাবাসি, এ দুগ্ধপোষ্য শিশু তোমাদের কোনই ক্ষতি করেনি, অন্ততঃ এই শিশুটিকে এক চুমুক পানি দাও।" কিন্তু পানির পরিবর্তে এক পাষণ্ডের তীর এসে শিশু আসগর (রাঃ)'র গন্ডাদেশ চিড়ে হযরত হোসাইন (আঃ)'র বাহুবিদ্ধ করলো। তিনি বেদনাকাতর নয়নে আকাশপানে একবার তাকালেন এবং তীর বের করে ছুড়ে ফেলে দিলেন। শিশু আসগর (রাঃ)'র গন্ডাদেশ হতে রক্তের ধারা প্রবাহিত হতে লাগলো। তিনি এক কোশ রক্ত নিয়ে আকাশের দিকে ছুড়ে মাড়লেন এবং বললেন - "হে আল্লাহ তুমি যদি খুশি থাকো তাহলে এক আলী আসগর কেনো, এমনি হাজারো আলী আসগর তোমার রাস্তায় একে একে কোরবান করতে থাকবো।" এমনিভাবে একের পর এক ঈমাম পরিবার শাহাদাত বরণ করতে করতে পুরুষবর্গের মধ্যে একমাত্র শাহজাদা হযরত জয়নাল আবেদিন (রাঃ) এবং হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ)-ই অবশিষ্ট রইলেন। অসুস্থতার জন্য হযরত জয়নাল আবেদিন (রাঃ) কে জেহাদে শরীক হতে বারন করে হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) নিজেই ময়দানে যাত্রার জন্য তৈরি হতে লাগলেন। ময়দানে সে কি করুন দৃশ্য! শহীদানদের রক্তে রঙ্গিন কারবালার জমিন, ভাই ভাতিজা সন্তান এবং অন্যান্য শহীদগণ খণ্ডিত-দ্বিখণ্ডিত দেহ মোবারক নিয়ে রক্তের চাঁদরে মুখ ঢেকে ময়দানের এখানে সেখানে পড়ে আছেন, আশার প্রদিপ নিভে গেছে, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অস্ত্র হাতে নিয়ে ঘোড়ায় সাওয়ার হয়ে শত্রু সেনাদের সামনে হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) বলতে লাগলেন - "হে জালেমগণ খোদাকে ভয় করো, যদি তোমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করে থাকো আমার নানাজান সাইয়েদুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (দঃ)'র প্রতি ঈমান এনে থাক; কেয়ামতের দিনের বিচারকে বিশ্বাস করে থাক তাহলে আমার নানাজান সাইয়েদুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) যিনি সকল গুনাহগারের শাফায়েতকারি; সকল মুসলমান যার শাফায়েতের প্রত্যাশি; তাঁর কাছে অন্যায় ভাবে আমাদেরকে হত্যার, এই রক্তপাতের কি জবাব দিবে ? তোমরাতো আমার পরিবার ও প্রিয়জনদের সকলকে শহিদ করেছো। এখনতো শুধু বাকি আছি আমি, যদি সিংহাসন বা রাজত্বই আমার প্রতি তোমাদের এই আক্রশের মূল কারন হয়ে থাকে, তাহলে আমাকে আরব ছেড়ে দুনিয়ার অন্যত্র চলে যেতে দাও। অন্যথা আমি আল্লাহর মর্জির উপরে সবর এখতিয়ার করে তাঁর হুকুম পালনে ব্রত হবো।" হযরতের এই বাণী শুনে অনেক কুফাবাসিরই চোখে অশ্রু দেখা দিল। ইবনে সা'দ এতদ দর্শনে ভিত হয়ে বলতে লাগলো - "আপনি কাহিনী সংক্ষিপ্ত করুন, ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের কাছে এজিদের বশ্যতা স্বীকার করুন অন্যথা যুদ্ধে অবতীর্ন হওয়া ছাড়া আপনার আর কোন গতি নেই।" হযরত বললেন - "অন্যায়ের পূজারীর হাতে ন্যায়ের পূজারী কি করে আত্মসমর্পন করতে পারে ?" অবশেষে ইবনে সা'দ ও সিমারের নেতৃত্বাধীনে এজিদবাহিনী নিঃসঙ্গ ও পরিশ্রান্ত শাহাজাদার প্রতি হামলা চালাতে তৈরি হলো। এজিদ বাহিনীর বাছাই করা শ্রেষ্ঠ সৈন্যগণ একে একে তাঁর সহিত সম্মুখ সমরে অগ্রসর হলে তিনি তলোয়ারের একই আঘাতে তাদেরকে ধরাশায়ী করে বীরবিক্রমে ফোরাতকূলে উপস্থিত হলে সা'দ ও সীমার তাদের পরিণামের কথা চিন্তা করে প্রমোদ গুনতে লাগলো। সীমার চিৎকার করে বলতে লাগলো - "হে সৈন্যদল, সাবধান! হোসাইন বিন আলী এক কাতরা পানিও যেন পান করতে না পারে, তাহলে আমাদের একজনও জীবন নিয়ে কারবালা ত্যাগ করতে পারবে না।" হযরত হোসাইন (আঃ) ফোরাতে নেমে যেই না আঁজল ভরে পানি উঠালেন অমনি হযরতের দন্ত মোবারক লক্ষ করে হাসিন-বিন-নমির নামক এক নরাধম-পাষন্ড তীর ছুঁড়ল, তীরের আঘাতে তাঁর দন্ত মোবারক হতে রক্তের ধারা প্রবাহিত হতে লাগলো; আঁজলের পানি রক্তে রঙ্গিন হলো। তিনি ঐ রক্তমাখা পানি আসমানের দিকে ছুঁড়ে মারলেন। ইবনে সা'দ ও সীমার যখন বুঝতে পারলো যে, এমনিধারায় যুদ্ধ চললে তাদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী তখন চারিদিক হতে একযোগে আক্রমন চালাতে এবং হযরতের উপর তীরের বর্ষন করতে নির্দেশ দেয়া হলো। চতুর্দিক হতে নিক্ষিপ্ত হাজার হাজার তীরের আঘাতে হযরতের ওযুদ মোবারক ক্ষত-বিক্ষত হতে লাগলো, নূরময় দেহ রক্তে রঙ্গিন হতে লাগলো। তথাপি তিনি বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে যেতে লাগলেন। এমনি সময়ে সেনান-বিন-আনেছ, খুলি-বিন-এজিদকে হযরতের গর্দান মোবারক দ্বিখণ্ডিত করার আদেশ দিলে সে সম্মুখে অগ্রসর হলো বটে, কিন্তু তাঁর গর্দান মোবারক লক্ষ্য করে তলোয়ার তুলতে সাহস করলো না। তখন সেনান-বিন-আনেছ স্বয়ং ঘোড়া ছুটিয়ে হযরতের সামনে এসে ঘোড়া থেকে নামলো এবং তলোয়ার দ্বারা হযরতের শির মোবারক ওযুদ মোবারক হতে আলাদা করে ফেললো। (ইন্না-লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন) অর্থাৎ তিনি শাহাদাত বরণ করলেন।
সমস্ত আকাশ মুহূর্তের মধ্যে রক্তবর্ন ধারণ করলো, চতুর্দিক গভীর তমসাচ্ছন্ন হলো, কিছুক্ষন পর তমসা কেটে গেলো, আকাশ হতে রক্তের বারিধারা বর্ষিত হতে লাগলো। এমনি করে কারবালা প্রান্তরের মর্মান্তিক ইতিহাস সংঘটিত হলো।
সত্য ও ন্যায়ের ঝান্ডা উড্ডয়নের জন্য, লক্ষ লক্ষ ভক্তপ্রান উম্মতে মোহাম্মদীর নাজাতের জন্য, ইসলামের বুনিয়াদকে সুদৃঢ় ও চিরস্থায়ি করার জন্য ঈমাম হোসাইন (আঃ) এবং তাঁর পরিবারবর্গ একে একে কারবালা-প্রান্তে শাহাদাত বরণ করলেন, কিন্তু এজিদের হাতে হাত রেখে বশ্যতা স্বীকার করলেন না।
নূরে নজরে হোসাইন হযরত খাজা গরীব নওয়ায রাঃ আঃ র পবিত্র কন্ঠে কি অন্তহীন তাৎপর্য নিয়ে ধ্বনিত হয়েছেঃ
"হোসাইনই শাহানশাহ হোসাইনই বাদশাহ
হোসাইনই দ্বীন হোসাইনই দ্বীনের ত্রাতা
দিয়েছেন শির দেননিতো ইয়াযিদের হাতে হাত
মহাসত্য তো এই যে হোসাইনই 'লা ইলাহার' বুনিয়াদ।"
লেখকঃ এস জি এম চিশতী
(সমাপ্ত)
Tuesday, November 4, 2014
Posted by
Unknown
# আল - ইয়াওমুল - আশুরা (সংকলন) পর্ব - ৩
আহলে বায়েত গণের শা'ন যে কত মহান, তাঁদের মর্তবা যে কত উর্ধ্বে, হুযুর পাক (সাঃ)'র পবিত্র বানীও তার যথার্থ প্রমাণ বহন করে।
হুজুর পাক (সাঃ) ফরমানঃ
"মোহাম্মদের আল বা পরিবারবর্গ মারেফত দোযখ হতে পরিত্রাণ লাভের অবলম্বন। মোহাম্মদের আল এর প্রতি ভালোবাসা পুল-সিরাত পার হওয়ার সনদ এবং মোহাম্মদের আল এর বেলায়েত আজাব হতে আমান স্বরূপ।"
হুজুর (সাঃ) ফরমানঃ
"তোমরা আমাকে ভালবাসো আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করার জন্য, আর আমার আহলে বায়েতকে ভালবাসো আমার ভালোবাসা লাভ করার জন্য।"
হুজুর (সাঃ) ফরমানঃ
"হে মানুষ, আমি তোমাদের জন্য ঐ (মুল্যবান) বস্তু রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তা' দৃঢ় ভাবে ধারণ কর তবে কখনও পথভ্রষ্ট বা গোমরাহ হবে না। তা' হলো আল্লাহর কিতাব ও আমার ইতরাত (আপনজন), আমার আহলে বায়েত।"
হুজুর (সাঃ) আরো ফরমানঃ
"আমার আহলে বায়েত হলো নূহ এর নৌকা স্বরূপ, যারা এতে আরোহণ করেছে (অর্থাৎ, এতে নিজেকে সমর্পন করেছে) তারা পরিত্রাণ লাভ করেছে। আর যারা এর বিরোধিতা করেছে (অর্থাৎ, আনুগত্য স্বীকার করে নাই) তারা নিমজ্জিত (অর্থাৎ, ধ্বংস প্রাপ্ত) হয়েছে।"
কিন্তু কি মর্মন্তুদ যে, অর্থের লোভে, প্রাচুর্য্যের লোভে, ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দিয়ে পরকালকে ভুলে গিয়ে উম্মতে মোহাম্মদীর মুখোশ পরে আবু সুফিয়ানের দৌহিত্র মাবিয়ার পুত্র এজিদের নির্দেশে তার অনুসারীগণ কারবালা প্রান্তরে এই আহলে বায়েতগণের অন্যতম, নূর - এ - নাযরে রাসুলে খোদা (সাঃ), জীগার গোশায়ে ফাতেমা (রাঃ) হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ), তাঁর পরিবারবর্গ ও সহচরবৃন্দের উপর নির্মম অত্যাচার চালাতে, নিষ্ঠুরভাবে হযরত আলী আকবর (রাঃ), দুগ্ধপোষ্য শিশু হযরত আলী আসগর (রাঃ) প্রমুখ আওলাদে হোসাইনকে এমনকি হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কেও হত্যা করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করেনি। হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) আহলে-বায়েত সম্পর্কে আল্লাহ ও রাসুলের বাণী স্মরণ করিয়া দেয়া সত্ত্বেও এজিদের অনুসারি এই নর পিশাচদের হৃদয়ে বিন্দুমাত্র দাগ কাটেনি। ক্ষমতা লোলুপ মদ্যপায়ী চরিত্রহীন এজিদ ইবনে মাবিয়ার হীন চক্রান্ত এবং বুজদেল - বেঈমান কুফাবাসীদের বেঈমানির ফলশ্রুতি স্বরূপ কারবালা প্রান্তরে ঈমাম পরিবারকে কেন্দ্র করে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল তারই প্রেক্ষাপটে রচিত হৃদয় বিদারক করুন ইতিহাসের কিয়দাংশ সংক্ষেপে এখানে তুলে ধরা হলো।
কুফাবাসীদের আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে তথায় যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) ২৭শে রজব মক্কা - মোয়াজ্জেমার উদ্দেশ্যে মদিনা তৈয়বা হতে বিদায় গ্রহণ করে যথা সময় মক্কা - মোয়াজ্জেমায় পদার্পন করলে মক্কার মুসলমানগণ, বিশেষ করে সাহাবায়েকেরামগণ হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়লেন। তিনি তাদের নিকট কুফাবাসিদের আমন্ত্রনের কথা এবং তথায় যাওয়ার স্বীয় আভিপ্রায় ব্যক্ত করলে সাহাবায়েকেরাম অসম্মতি প্রকাশ করলেন। এদিকে কুফাবাসিদের শতশত আমন্ত্রনপত্র ক্রমাগত তাঁর নিকট পৌঁছুতে থাকলে তিনি তথায় যাত্রার সিদ্ধান্ত নিলে সাহাবায়েকেরাম হযরত ঈমাম মোসলেম হানফি (রাঃ) কে কুফায় পাঠিয়ে তথাকার সত্যিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কে পরামর্শ দিলে হযরত তা-ই করলেন। হযরত ঈমাম মোসলেম হানফি (রাঃ) তথায় পৌঁছুলে কুফাবাসিগন তাঁকে আজীমুসশা'ন সম্বর্ধনা প্রদান করলো। শতশত কুফাবাসি তাঁর নিকট বয়াত গ্রহণ করতে লাগলো। শাসনকর্তা নোমান-বিন-বশিরও এর কোনও প্রকার বিরোধিতা করেনি। ঈমাম মোসলেম হানফি (রাঃ) তাই সরল বিশ্বাসে তথাকার পরিস্থিতি হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ)'র তথায় আগমন সম্পুর্নরুপে অনুকুল মনে করে হযরতকে কুফায় আগমনের জন্য সুপারিশ করে পত্র পাঠালে এবং হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কুফায় যাত্রার প্রস্তুতি নিতে থাকলে মক্কা - মোয়াজ্জেমার সাহাবায়েকেরাম বিশেষ করে হযরত আব্দুল্লাহ-বিন-উমর (রাঃ), হযরত উমর-বিন-আস (রাঃ), হযরত আব্দুল্লাহ বিন জায়ের (রাঃ) প্রমুখ সাহাবায়েকেরাম কুফাবাসিদের বদচরিত্র ও বেওফাদারি সম্পর্কে হযরতকে পুনরায় স্মরন করিয়ে তথায় যেতে ঘোর আপত্তি জানালে তিনি বললেন, "আমি সবই অবগত, অর্থাৎ শুধু কুফাবাসিদের চরিত্রই নয় আরও অনেক বিষয়ে আমি অবগত।" কিন্তু এই যাত্রার পেছনে আল্লাহপাকের এক বিশেষ রা'জ বা নিগূড় রহস্য নিহিত আছে।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কুফার অন্তর্গত ফোরাতকুলে কারবালা প্রান্তরে কি ঘটবে তা পূর্ব হতেই অবগত ছিলেন। মক্কা মোয়াজ্জেমায় যাত্রার উদ্দেশ্যে মদিনা তৈয়বা হতে বিদায় নেয়ার পূর্ব রজনীতে তিনি যখন বিচ্ছেদ বেদনায় ভারাক্রান্ত হৃদয়ে রাসুলে খোদা (দঃ) এর রওজা আকদাছকে জড়িয়ে ধরে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিগলিত কন্ঠে আরজ করেছিলেন "হে নানাজান! আমি ঐ হোসাইন, যার জন্য বনের হরিণী নিজের বাচ্চা নিয়ে আসতো; আমি ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ)'র ঐ হৃদয়ের ধন যার দোলনা ফেরেশতারা দোলাতো। আমি ঐ শাহজাদা, যাকে আপনি স্বীয় স্কন্ধ মোবারকে সাওয়ার করাতেন।" এমনিভাবে আরজ করতে করতে এক সময় যখন তাঁর চোখে তন্দ্রা নেমে এলো, তিনি দেখতে পেলেন, হুজুর আকরাম (সাঃ) নূর দীপ্ত (জালওয়াগার) অবস্থায় তাঁর মাথা মোবারক স্বীয় কোল-মোবারকে নিয়ে ফরমাচ্ছেন - "হে আমার হৃদয়ের ধন হোসাইন, অতিশিঘ্রই তুমি আমার সাথে মিলিত হবে। আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি ক্ষুধা-পিপাসায় ক্লান্তদেহে আমার কাছে ফিরে এসেছো। তোমার এই নূরীদেহ কারবালার মাটিতে দ্বিখণ্ডিত হবে। ঐ মাটি তোমার হলকমের রক্তে রঙ্গীন হবে। বৎস হোসাইন সবর এখতেয়ার করো।" তন্দ্রা কেটে গেলে তিনি তাঁর আম্মাজান ক্বেবলা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ)'র রওজা পাকে উপস্থিত হয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে, বিগলিত কণ্ঠে যখন আরজ করলেন - "আম্মাজান আপনার প্রানাধিক প্রিয় হোসাইন কারবালা প্রান্তরে হলকম কাটাতে চলেছে, তাই আপনার নিকট বিদায় নিতে এসেছি।" মাযার পাক হতে আওয়াজ এলো - "আমি তোমার অপেক্ষায় আছি"। এতদ্বভিন্ন তাঁর শাহাদাত বরণ তথা সাইয়েদোশশোহাদার মর্যাদা লাভের সংবাদ তাঁর শৈশবেই জিবরাঈল (আঃ) হযরত রাসুলে খোদা (দঃ) কে প্রদান করেছিলেন। যা হযরত উম্মে সালমা (রাঃ), হযরত আলী আল মর্তোজা (কঃ), হযরত ফাতেমতুজ্জোহরা (রাঃ) এবং অনেক বিশিষ্ট সাহাবায়েকেরাম এমনকি তিনি নিজেও অবগত ছিলেন।
হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) সপরিবারে অল্প সংখ্যক সদস্যের কাফেলা নিয়ে কুফা অভিমুখে রওনা হয়ে "মোকামে-শাকুকে" পৌঁছুলে হযরত ঈমাম মোসলেম (রাঃ)'র শাহাদাত বরণের দুঃসংবাদ পেয়ে বললেন "ইন্নালিল্লাহে ওয়াইন্না এলাইহে রাজেউন" এবং কাফেলার সদস্যগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "তোমাদের মধ্যে যারা ফিরে যেতে চাও যেতে পার, আমি সন্তুষ্টচিত্তে তোমাদেরকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছি।" কেউই যখন হযরতকে ছেড়ে ফিরে যেতে রাজী হলেন না, তখন তিনি কাফেলাসহ অগ্রসর হয়ে পথ অতিক্রম করতে করতে ২রা মহররম এক স্থানে পৌঁছুলে তাঁর ঘোড়া হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো। অনেক চেষ্টা করেও ঘোড়াকে যখন এক কদমও অগ্রসর করানো গেলো না তখন হযরত জিজ্ঞেস করলেন, "এটা কোন স্থান ?" কাফেলার সাথীগণ আরজ করলেন - "একে মারহীয়া বলে"। তিনি আবার বললেন - "এর আর কোনও নাম আছে কি ?" আরজ করা হলো, "একে কারবালাও বলা হয়"। হযরত উচ্চারণ করলেন "আল্লাহু-আকবর", বললেন- "কারবালার মাটি ? এইতো ঐ স্থান যার সম্বন্ধে আমার নানাজান ক্বেবলা রাসুল-এ-খোদা (দঃ) বলেছিলেন।" এবং তাঁবু ফেলার নির্দেশ দিলেন।
৩রা মহররম সূর্যোদয়ের পরপরই আব্দুল্লাহ-ইবনে-সাদ এজিদের বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনী নিয়ে কারবালা প্রান্তরে উপস্থিত হলো, হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) তাকে ডেকে এনে অনেক সদুপদেশ দিলেন, আখেরাতের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে অবহিত করলেন। কিন্তু পুরষ্কারের লোভ, পদোন্নতির লালসার কারনে তার হৃদয় বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না। হযরত তিনটি প্রস্তাব দিলেন যথাঃ
"আমাকে সেরহেদাত যেতে দাও; শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য এজিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার্থে তার নিকট যেতে দাও; অথবা আমাকে হেজ্বাজে ফিরে যেতে দাও।" পাষাণ হৃদয় ইবনে সাদ তা মেনে নিলো না। সময় অতিবাহিত হতে লাগলো। এক সময় ফোরাতের পানিও রাসুলে খোদা (দঃ)'র নূর এ নাজার হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) এর পরিবার এবং তাঁর সাথীগণের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো।
৯ই মহররম আব্দুল্লাহ ইবনে সাদ এজিদের পক্ষে যুদ্ধের ঘোষণা দিলে হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) একরাত্রের সময় চেয়ে নিলেন, বললেন -"আগামীকাল দেখা যাবে"। রাত্রি নেমে এলো, হযরত সাথীদের সবাইকে ডেকে বললেন - "রাত্র হয়ে গেছে আল্লাহ তোমাদের হেফাজত করুন, আমি সন্তুষ্ট চিত্তে অনুমতি দিচ্ছি তোমরা একেকটি উট নিয়ে নিজ নিজ শহরে বা গ্রামে চলে যাও, যেন আল্লাহ এই মুসিবত আসান করেন। কেননা রাত পোহালে ইবনে সা'দের লোকেরা কেবল আমাকেই তালাশ করবে, আর কাউকেই করবে না।" হযরতকে একা ফেলে কেউই যেতে রাজী হলেন না। সকল অনুসারিদের তাঁর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, সত্যের জন্য আত্মত্যাগের তাদের এহেন দৃঢ়মনোভাবের পরিচয় পেয়ে তিনি উৎসাহিত হলেন এবং স্বীয় তলোয়ার বের করে পরিষ্কার করতে লাগলেন। সারারাত্রি যেকরে-এলাহীতে মশগুল থাকাকালীন ক্ষনিকের জন্য তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে দেখলেন, সরওয়ারে কায়েনাত রাসুলে খোদা (সাঃ) কতিপয় নুরদ্দীপ্ত সুরতসহ তথায় তশরীফ এনেছেন এবং শাহজাদা হোসাইন (আঃ) কে স্বীয় কোল মোবারকে নিয়ে বলতে লাগলেন - "হে আমার নূর এ নাজার, হে আমার হৃদয়ের ধন, চেয়ে দেখো এই সকল পবিত্র আরওয়াহ তোমারই খেদমতে হাজির। আগামীকালের রাত্রের আহার তুমি আমারই সাথে করবে। বেহেশত তোমারই প্রতিক্ষায় আছে। বেহেশতের হুরগণ তোমারি পথপানে চেয়ে আছে।" তন্দ্রা কেটে গেলে তিনি এই সংবাদ তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিকট ব্যক্ত করলে সকলেই পেরেশান হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তাঁবুর মধ্যে রোনাজারী আরম্ভ হলো, সে এক করুন দৃশ্য। হযরতের ভগ্নি হযরত জয়নব (রাঃ) কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ হয়ে পড়লেন।
হুজুর পাক (সাঃ) ফরমানঃ
"মোহাম্মদের আল বা পরিবারবর্গ মারেফত দোযখ হতে পরিত্রাণ লাভের অবলম্বন। মোহাম্মদের আল এর প্রতি ভালোবাসা পুল-সিরাত পার হওয়ার সনদ এবং মোহাম্মদের আল এর বেলায়েত আজাব হতে আমান স্বরূপ।"
হুজুর (সাঃ) ফরমানঃ
"তোমরা আমাকে ভালবাসো আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করার জন্য, আর আমার আহলে বায়েতকে ভালবাসো আমার ভালোবাসা লাভ করার জন্য।"
হুজুর (সাঃ) ফরমানঃ
"হে মানুষ, আমি তোমাদের জন্য ঐ (মুল্যবান) বস্তু রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তা' দৃঢ় ভাবে ধারণ কর তবে কখনও পথভ্রষ্ট বা গোমরাহ হবে না। তা' হলো আল্লাহর কিতাব ও আমার ইতরাত (আপনজন), আমার আহলে বায়েত।"
হুজুর (সাঃ) আরো ফরমানঃ
"আমার আহলে বায়েত হলো নূহ এর নৌকা স্বরূপ, যারা এতে আরোহণ করেছে (অর্থাৎ, এতে নিজেকে সমর্পন করেছে) তারা পরিত্রাণ লাভ করেছে। আর যারা এর বিরোধিতা করেছে (অর্থাৎ, আনুগত্য স্বীকার করে নাই) তারা নিমজ্জিত (অর্থাৎ, ধ্বংস প্রাপ্ত) হয়েছে।"
কিন্তু কি মর্মন্তুদ যে, অর্থের লোভে, প্রাচুর্য্যের লোভে, ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দিয়ে পরকালকে ভুলে গিয়ে উম্মতে মোহাম্মদীর মুখোশ পরে আবু সুফিয়ানের দৌহিত্র মাবিয়ার পুত্র এজিদের নির্দেশে তার অনুসারীগণ কারবালা প্রান্তরে এই আহলে বায়েতগণের অন্যতম, নূর - এ - নাযরে রাসুলে খোদা (সাঃ), জীগার গোশায়ে ফাতেমা (রাঃ) হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ), তাঁর পরিবারবর্গ ও সহচরবৃন্দের উপর নির্মম অত্যাচার চালাতে, নিষ্ঠুরভাবে হযরত আলী আকবর (রাঃ), দুগ্ধপোষ্য শিশু হযরত আলী আসগর (রাঃ) প্রমুখ আওলাদে হোসাইনকে এমনকি হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কেও হত্যা করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করেনি। হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) আহলে-বায়েত সম্পর্কে আল্লাহ ও রাসুলের বাণী স্মরণ করিয়া দেয়া সত্ত্বেও এজিদের অনুসারি এই নর পিশাচদের হৃদয়ে বিন্দুমাত্র দাগ কাটেনি। ক্ষমতা লোলুপ মদ্যপায়ী চরিত্রহীন এজিদ ইবনে মাবিয়ার হীন চক্রান্ত এবং বুজদেল - বেঈমান কুফাবাসীদের বেঈমানির ফলশ্রুতি স্বরূপ কারবালা প্রান্তরে ঈমাম পরিবারকে কেন্দ্র করে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল তারই প্রেক্ষাপটে রচিত হৃদয় বিদারক করুন ইতিহাসের কিয়দাংশ সংক্ষেপে এখানে তুলে ধরা হলো।
কুফাবাসীদের আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে তথায় যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) ২৭শে রজব মক্কা - মোয়াজ্জেমার উদ্দেশ্যে মদিনা তৈয়বা হতে বিদায় গ্রহণ করে যথা সময় মক্কা - মোয়াজ্জেমায় পদার্পন করলে মক্কার মুসলমানগণ, বিশেষ করে সাহাবায়েকেরামগণ হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়লেন। তিনি তাদের নিকট কুফাবাসিদের আমন্ত্রনের কথা এবং তথায় যাওয়ার স্বীয় আভিপ্রায় ব্যক্ত করলে সাহাবায়েকেরাম অসম্মতি প্রকাশ করলেন। এদিকে কুফাবাসিদের শতশত আমন্ত্রনপত্র ক্রমাগত তাঁর নিকট পৌঁছুতে থাকলে তিনি তথায় যাত্রার সিদ্ধান্ত নিলে সাহাবায়েকেরাম হযরত ঈমাম মোসলেম হানফি (রাঃ) কে কুফায় পাঠিয়ে তথাকার সত্যিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কে পরামর্শ দিলে হযরত তা-ই করলেন। হযরত ঈমাম মোসলেম হানফি (রাঃ) তথায় পৌঁছুলে কুফাবাসিগন তাঁকে আজীমুসশা'ন সম্বর্ধনা প্রদান করলো। শতশত কুফাবাসি তাঁর নিকট বয়াত গ্রহণ করতে লাগলো। শাসনকর্তা নোমান-বিন-বশিরও এর কোনও প্রকার বিরোধিতা করেনি। ঈমাম মোসলেম হানফি (রাঃ) তাই সরল বিশ্বাসে তথাকার পরিস্থিতি হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ)'র তথায় আগমন সম্পুর্নরুপে অনুকুল মনে করে হযরতকে কুফায় আগমনের জন্য সুপারিশ করে পত্র পাঠালে এবং হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কুফায় যাত্রার প্রস্তুতি নিতে থাকলে মক্কা - মোয়াজ্জেমার সাহাবায়েকেরাম বিশেষ করে হযরত আব্দুল্লাহ-বিন-উমর (রাঃ), হযরত উমর-বিন-আস (রাঃ), হযরত আব্দুল্লাহ বিন জায়ের (রাঃ) প্রমুখ সাহাবায়েকেরাম কুফাবাসিদের বদচরিত্র ও বেওফাদারি সম্পর্কে হযরতকে পুনরায় স্মরন করিয়ে তথায় যেতে ঘোর আপত্তি জানালে তিনি বললেন, "আমি সবই অবগত, অর্থাৎ শুধু কুফাবাসিদের চরিত্রই নয় আরও অনেক বিষয়ে আমি অবগত।" কিন্তু এই যাত্রার পেছনে আল্লাহপাকের এক বিশেষ রা'জ বা নিগূড় রহস্য নিহিত আছে।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কুফার অন্তর্গত ফোরাতকুলে কারবালা প্রান্তরে কি ঘটবে তা পূর্ব হতেই অবগত ছিলেন। মক্কা মোয়াজ্জেমায় যাত্রার উদ্দেশ্যে মদিনা তৈয়বা হতে বিদায় নেয়ার পূর্ব রজনীতে তিনি যখন বিচ্ছেদ বেদনায় ভারাক্রান্ত হৃদয়ে রাসুলে খোদা (দঃ) এর রওজা আকদাছকে জড়িয়ে ধরে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিগলিত কন্ঠে আরজ করেছিলেন "হে নানাজান! আমি ঐ হোসাইন, যার জন্য বনের হরিণী নিজের বাচ্চা নিয়ে আসতো; আমি ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ)'র ঐ হৃদয়ের ধন যার দোলনা ফেরেশতারা দোলাতো। আমি ঐ শাহজাদা, যাকে আপনি স্বীয় স্কন্ধ মোবারকে সাওয়ার করাতেন।" এমনিভাবে আরজ করতে করতে এক সময় যখন তাঁর চোখে তন্দ্রা নেমে এলো, তিনি দেখতে পেলেন, হুজুর আকরাম (সাঃ) নূর দীপ্ত (জালওয়াগার) অবস্থায় তাঁর মাথা মোবারক স্বীয় কোল-মোবারকে নিয়ে ফরমাচ্ছেন - "হে আমার হৃদয়ের ধন হোসাইন, অতিশিঘ্রই তুমি আমার সাথে মিলিত হবে। আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি ক্ষুধা-পিপাসায় ক্লান্তদেহে আমার কাছে ফিরে এসেছো। তোমার এই নূরীদেহ কারবালার মাটিতে দ্বিখণ্ডিত হবে। ঐ মাটি তোমার হলকমের রক্তে রঙ্গীন হবে। বৎস হোসাইন সবর এখতেয়ার করো।" তন্দ্রা কেটে গেলে তিনি তাঁর আম্মাজান ক্বেবলা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ)'র রওজা পাকে উপস্থিত হয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে, বিগলিত কণ্ঠে যখন আরজ করলেন - "আম্মাজান আপনার প্রানাধিক প্রিয় হোসাইন কারবালা প্রান্তরে হলকম কাটাতে চলেছে, তাই আপনার নিকট বিদায় নিতে এসেছি।" মাযার পাক হতে আওয়াজ এলো - "আমি তোমার অপেক্ষায় আছি"। এতদ্বভিন্ন তাঁর শাহাদাত বরণ তথা সাইয়েদোশশোহাদার মর্যাদা লাভের সংবাদ তাঁর শৈশবেই জিবরাঈল (আঃ) হযরত রাসুলে খোদা (দঃ) কে প্রদান করেছিলেন। যা হযরত উম্মে সালমা (রাঃ), হযরত আলী আল মর্তোজা (কঃ), হযরত ফাতেমতুজ্জোহরা (রাঃ) এবং অনেক বিশিষ্ট সাহাবায়েকেরাম এমনকি তিনি নিজেও অবগত ছিলেন।
হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) সপরিবারে অল্প সংখ্যক সদস্যের কাফেলা নিয়ে কুফা অভিমুখে রওনা হয়ে "মোকামে-শাকুকে" পৌঁছুলে হযরত ঈমাম মোসলেম (রাঃ)'র শাহাদাত বরণের দুঃসংবাদ পেয়ে বললেন "ইন্নালিল্লাহে ওয়াইন্না এলাইহে রাজেউন" এবং কাফেলার সদস্যগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "তোমাদের মধ্যে যারা ফিরে যেতে চাও যেতে পার, আমি সন্তুষ্টচিত্তে তোমাদেরকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছি।" কেউই যখন হযরতকে ছেড়ে ফিরে যেতে রাজী হলেন না, তখন তিনি কাফেলাসহ অগ্রসর হয়ে পথ অতিক্রম করতে করতে ২রা মহররম এক স্থানে পৌঁছুলে তাঁর ঘোড়া হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো। অনেক চেষ্টা করেও ঘোড়াকে যখন এক কদমও অগ্রসর করানো গেলো না তখন হযরত জিজ্ঞেস করলেন, "এটা কোন স্থান ?" কাফেলার সাথীগণ আরজ করলেন - "একে মারহীয়া বলে"। তিনি আবার বললেন - "এর আর কোনও নাম আছে কি ?" আরজ করা হলো, "একে কারবালাও বলা হয়"। হযরত উচ্চারণ করলেন "আল্লাহু-আকবর", বললেন- "কারবালার মাটি ? এইতো ঐ স্থান যার সম্বন্ধে আমার নানাজান ক্বেবলা রাসুল-এ-খোদা (দঃ) বলেছিলেন।" এবং তাঁবু ফেলার নির্দেশ দিলেন।
৩রা মহররম সূর্যোদয়ের পরপরই আব্দুল্লাহ-ইবনে-সাদ এজিদের বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনী নিয়ে কারবালা প্রান্তরে উপস্থিত হলো, হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) তাকে ডেকে এনে অনেক সদুপদেশ দিলেন, আখেরাতের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে অবহিত করলেন। কিন্তু পুরষ্কারের লোভ, পদোন্নতির লালসার কারনে তার হৃদয় বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না। হযরত তিনটি প্রস্তাব দিলেন যথাঃ
"আমাকে সেরহেদাত যেতে দাও; শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য এজিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার্থে তার নিকট যেতে দাও; অথবা আমাকে হেজ্বাজে ফিরে যেতে দাও।" পাষাণ হৃদয় ইবনে সাদ তা মেনে নিলো না। সময় অতিবাহিত হতে লাগলো। এক সময় ফোরাতের পানিও রাসুলে খোদা (দঃ)'র নূর এ নাজার হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) এর পরিবার এবং তাঁর সাথীগণের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো।
৯ই মহররম আব্দুল্লাহ ইবনে সাদ এজিদের পক্ষে যুদ্ধের ঘোষণা দিলে হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) একরাত্রের সময় চেয়ে নিলেন, বললেন -"আগামীকাল দেখা যাবে"। রাত্রি নেমে এলো, হযরত সাথীদের সবাইকে ডেকে বললেন - "রাত্র হয়ে গেছে আল্লাহ তোমাদের হেফাজত করুন, আমি সন্তুষ্ট চিত্তে অনুমতি দিচ্ছি তোমরা একেকটি উট নিয়ে নিজ নিজ শহরে বা গ্রামে চলে যাও, যেন আল্লাহ এই মুসিবত আসান করেন। কেননা রাত পোহালে ইবনে সা'দের লোকেরা কেবল আমাকেই তালাশ করবে, আর কাউকেই করবে না।" হযরতকে একা ফেলে কেউই যেতে রাজী হলেন না। সকল অনুসারিদের তাঁর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, সত্যের জন্য আত্মত্যাগের তাদের এহেন দৃঢ়মনোভাবের পরিচয় পেয়ে তিনি উৎসাহিত হলেন এবং স্বীয় তলোয়ার বের করে পরিষ্কার করতে লাগলেন। সারারাত্রি যেকরে-এলাহীতে মশগুল থাকাকালীন ক্ষনিকের জন্য তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে দেখলেন, সরওয়ারে কায়েনাত রাসুলে খোদা (সাঃ) কতিপয় নুরদ্দীপ্ত সুরতসহ তথায় তশরীফ এনেছেন এবং শাহজাদা হোসাইন (আঃ) কে স্বীয় কোল মোবারকে নিয়ে বলতে লাগলেন - "হে আমার নূর এ নাজার, হে আমার হৃদয়ের ধন, চেয়ে দেখো এই সকল পবিত্র আরওয়াহ তোমারই খেদমতে হাজির। আগামীকালের রাত্রের আহার তুমি আমারই সাথে করবে। বেহেশত তোমারই প্রতিক্ষায় আছে। বেহেশতের হুরগণ তোমারি পথপানে চেয়ে আছে।" তন্দ্রা কেটে গেলে তিনি এই সংবাদ তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিকট ব্যক্ত করলে সকলেই পেরেশান হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তাঁবুর মধ্যে রোনাজারী আরম্ভ হলো, সে এক করুন দৃশ্য। হযরতের ভগ্নি হযরত জয়নব (রাঃ) কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ হয়ে পড়লেন।
চলবে...
লেখকঃ এস জি এম চিশতী
Saturday, November 1, 2014
Posted by
Unknown
# আল - ইয়াওমুল - আশুরা (সংকলন) পর্ব - ২
যাকে কেন্দ্র করে ১০ই মহররম কারবালার প্রান্তরে হৃদয়-বিদারক ঘটনার অবতারণা হলো, রচিত হলো করুণতম বিয়োগান্ত ইতিহাস; যিনি ইয়াজিদ ইবনে মাবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (আবু সুফিয়ান এবং তার স্ত্রী হিন্দা, হুজুরপাক (সাঃ) এবং তাঁর অনুসারি ও অনুরাগীগণের প্রতি চরম জিঘাংসা পোষণ করতো) এর প্ররোচনায় প্ররোচিত, প্রলোভনে প্রলুব্ধ আব্দুল্লাহ ইবনে সা'দ, ওবায়দুল্লা ইবনে জিয়াদ, সীমার বিন জিল জৌশন প্রমুখ মুসলমান নামধারী দুশমনে রাসুল, দুশমনে আহলে বায়েত দ্বারা কারবালার ময়দানে আক্রান্ত হলেন - তিনি ঐ আহলে বায়েতের অন্যতম আহলে বায়েত, হযরত আলী-আল-মরতুজা শের-এ খোদা (কঃ)'র হৃদয়ের ধন; সাইয়েদাতুন্নেছা হযরত ফাতেমাতুজজোহরা (রাঃ)'র কলিজার টুকরা; রাসুলেখোদা (সাঃ)'র নুর-এ-নাজার, প্রানের প্রান, সাইয়েদেনা সাইয়েদোশশোহাদা হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ)। যার সম্পর্কে রাসুলেখোদা (সাঃ) একদা বলেছেনঃ
"হোসাইন আমা হতে আর আমি হোসাইন হতে।" (তিরমিযি শরীফ, রাবি- হযরত ইয়ালি-বিন-মারহ)
যাকে একদা হযরত উমর (রাঃ) রাসুলে খোদা (সাঃ)'র স্কন্ধ মোবারক মতান্তরে পিঠ মোবারকে সাওয়ার দেখে আবেগের সাথে বলে উঠেছিলেনঃ
"কতই না উত্তম সাওয়ার"
এতদ শ্রবনে রাসুলে খোদা (সাঃ) বলেছিলেনঃ
"সাওয়ারীওতো কত উত্তম।"
যার ঠোঁট ও গর্দান মোবারকে রাসুলে খোদা (সাঃ) বহুবার চুম্বন খেয়েছিলেন। যাকে উদ্দেশ্য করে তিনি একদা বলেছিলেন - "হে আল্লাহ, এঁকে তুমি ভালবেসো, কেননা আমি এঁকে ভালবাসি।"
প্রাসঙ্গিকক্রমে এখানে 'আহলে-বায়েত' সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করতে হয়। 'আহলে-বায়েত' এর আভিধানিক অর্থ পরিবারের সদস্য। কিন্তু রাসুলে খোদা (সাঃ)'র 'আহলে-বায়েত' বা তাঁর পুণ্যময় পরিবারের সদস্য বলতে সাইয়েদেনা হযরত আমিরুল মু'মীনিন আলী-আল-মর্তোজা শেরেখোদা (কঃ), তাঁর সহধর্মিণী ও রাসুলে তনয়া সাইয়েদাতুন্নেছা হযরত ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ) এবং তাঁদের দুই পুত্র হযরত ঈমাম হাসান (আঃ) ও হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কে বোঝায়। কারন, যখন কোরআনে পাকে এরশাদ হলোঃ
"হে রাসুল, আপনি বলুন, তোমাদের (হেদায়েতের) জন্য আমি যে পরিশ্রম করেছি, তার বিনিময়ে আমার কেরাবাতের প্রতি ভালোবাসা ভিন্ন তোমাদের কাছে আমি আর কিছুই প্রত্যাশা করি না।" (আল-কোরাআন)
তখন সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেনঃ
"ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ), আপনার কেরাবাত বা ঐ সকল নিকটতম ব্যাক্তিবর্গ কারা ? যাঁদের প্রতি ভালোবাসা আমাদের জন্য আল্লাহপাক লাজেম করে দিলেন।"
হুজুর (সাঃ) ফরমালেনঃ
"আলী, ফাতেমা এবং তাঁদের পুত্রদ্বয়।"(দোররে মনসুর, রাবি- হযরত ইবনে আব্বাস)
আহলে বায়েতগন আল্লাহ-রাব্বুল ইজ্জাতের নিকট কত প্রিয়, তাঁদের শান ও আজমত তাঁর দরবারে যে কত মহান, উপরোক্ত আয়াতে-কারিমা তার যথার্থ প্রমান। এখানে আল্লাহ-পাক একদিকে যেমনি আহলে বায়েতের প্রতি ভালোবাসা ও প্রেমকে তাঁর সকল বান্দাদের জন্য লাজেম করেছেন, অপরদিকে তেমনি তাঁদের প্রতি স্বীয় ভালোবাসা বা প্রেমকেও প্রকাশ করেছেন। পরোক্ষভাবে তুলে ধরেছেন তাঁদের মহান শা'নকে সকল বান্দার কাছে বিশেষ করে সকল আহলে - ঈমানের কাছে।
সূরা "আররাহমানে" এরশাদ হচ্ছেঃ
"তিনিইতো দুই সাগর প্রবাহিত করেন, যারা পরষ্পর মিলিত হয়।"
"তাদের মধ্য হইতে নির্গত হয়, মুক্তা ও মানিক।"
এই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সাহাবি হযরত আনেছ বিন-মালেক বলেনঃ
"আল্লাহ -রাব্বুল ইজ্জত এখানে সাগরদ্বয়ের মিলিত প্রবাহ বলতে আলী (কঃ) ও হযরত ফাতেমা (রাঃ) এবং হযরত হাসান (আঃ) ও হযরত হোসাইন (আঃ) কেই বুঝিয়েছেন।"(তাফসিরে দোররা-মনসুর)
সাগর বলতে এখানে নেয়ামতের সাগর বা রহমতের সাগরকে বোঝানো হয়েছে। সাগর যেমনি কুল-কিনারা বিহীন অফুরন্ত পানির আধার, এই সাগরদ্বয়ও তেমনি অফুরন্ত নেয়ামত, অফুরন্ত রহমত, অফুরন্ত বেলায়েত তথা আছরারে-এলাহির অসীম আধার। আল্লাহপাক এখানে অসীম - অফুরন্ত নেয়ামতের, রহমতের, বেলায়েতের সাগরের সাথে, আহলে-বায়েতের অন্যতম প্রধান দুই আহলে বায়েত হযরত আলী (কঃ) এবং হযরত ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ) কে তুলনা করে, তাঁদের মহান শান ও আজমাতকে যেমনি বান্দার নিকট তুলে ধরেছেন, ঠিক তেমনি অপর দুই আহলে-বায়েত হযরত ঈমাম হাসান (আঃ) ও হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ)'র মহান শান ও আজমাতকে তুলে ধরেছেন বান্দার নিকট মুক্তা ও মানিকের সঙ্গে তুলনা করে।
"হোসাইন আমা হতে আর আমি হোসাইন হতে।" (তিরমিযি শরীফ, রাবি- হযরত ইয়ালি-বিন-মারহ)
যাকে একদা হযরত উমর (রাঃ) রাসুলে খোদা (সাঃ)'র স্কন্ধ মোবারক মতান্তরে পিঠ মোবারকে সাওয়ার দেখে আবেগের সাথে বলে উঠেছিলেনঃ
"কতই না উত্তম সাওয়ার"
এতদ শ্রবনে রাসুলে খোদা (সাঃ) বলেছিলেনঃ
"সাওয়ারীওতো কত উত্তম।"
যার ঠোঁট ও গর্দান মোবারকে রাসুলে খোদা (সাঃ) বহুবার চুম্বন খেয়েছিলেন। যাকে উদ্দেশ্য করে তিনি একদা বলেছিলেন - "হে আল্লাহ, এঁকে তুমি ভালবেসো, কেননা আমি এঁকে ভালবাসি।"
প্রাসঙ্গিকক্রমে এখানে 'আহলে-বায়েত' সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করতে হয়। 'আহলে-বায়েত' এর আভিধানিক অর্থ পরিবারের সদস্য। কিন্তু রাসুলে খোদা (সাঃ)'র 'আহলে-বায়েত' বা তাঁর পুণ্যময় পরিবারের সদস্য বলতে সাইয়েদেনা হযরত আমিরুল মু'মীনিন আলী-আল-মর্তোজা শেরেখোদা (কঃ), তাঁর সহধর্মিণী ও রাসুলে তনয়া সাইয়েদাতুন্নেছা হযরত ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ) এবং তাঁদের দুই পুত্র হযরত ঈমাম হাসান (আঃ) ও হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কে বোঝায়। কারন, যখন কোরআনে পাকে এরশাদ হলোঃ
"হে রাসুল, আপনি বলুন, তোমাদের (হেদায়েতের) জন্য আমি যে পরিশ্রম করেছি, তার বিনিময়ে আমার কেরাবাতের প্রতি ভালোবাসা ভিন্ন তোমাদের কাছে আমি আর কিছুই প্রত্যাশা করি না।" (আল-কোরাআন)
তখন সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেনঃ
"ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ), আপনার কেরাবাত বা ঐ সকল নিকটতম ব্যাক্তিবর্গ কারা ? যাঁদের প্রতি ভালোবাসা আমাদের জন্য আল্লাহপাক লাজেম করে দিলেন।"
হুজুর (সাঃ) ফরমালেনঃ
"আলী, ফাতেমা এবং তাঁদের পুত্রদ্বয়।"(দোররে মনসুর, রাবি- হযরত ইবনে আব্বাস)
আহলে বায়েতগন আল্লাহ-রাব্বুল ইজ্জাতের নিকট কত প্রিয়, তাঁদের শান ও আজমত তাঁর দরবারে যে কত মহান, উপরোক্ত আয়াতে-কারিমা তার যথার্থ প্রমান। এখানে আল্লাহ-পাক একদিকে যেমনি আহলে বায়েতের প্রতি ভালোবাসা ও প্রেমকে তাঁর সকল বান্দাদের জন্য লাজেম করেছেন, অপরদিকে তেমনি তাঁদের প্রতি স্বীয় ভালোবাসা বা প্রেমকেও প্রকাশ করেছেন। পরোক্ষভাবে তুলে ধরেছেন তাঁদের মহান শা'নকে সকল বান্দার কাছে বিশেষ করে সকল আহলে - ঈমানের কাছে।
সূরা "আররাহমানে" এরশাদ হচ্ছেঃ
"তিনিইতো দুই সাগর প্রবাহিত করেন, যারা পরষ্পর মিলিত হয়।"
"তাদের মধ্য হইতে নির্গত হয়, মুক্তা ও মানিক।"
এই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সাহাবি হযরত আনেছ বিন-মালেক বলেনঃ
"আল্লাহ -রাব্বুল ইজ্জত এখানে সাগরদ্বয়ের মিলিত প্রবাহ বলতে আলী (কঃ) ও হযরত ফাতেমা (রাঃ) এবং হযরত হাসান (আঃ) ও হযরত হোসাইন (আঃ) কেই বুঝিয়েছেন।"(তাফসিরে দোররা-মনসুর)
সাগর বলতে এখানে নেয়ামতের সাগর বা রহমতের সাগরকে বোঝানো হয়েছে। সাগর যেমনি কুল-কিনারা বিহীন অফুরন্ত পানির আধার, এই সাগরদ্বয়ও তেমনি অফুরন্ত নেয়ামত, অফুরন্ত রহমত, অফুরন্ত বেলায়েত তথা আছরারে-এলাহির অসীম আধার। আল্লাহপাক এখানে অসীম - অফুরন্ত নেয়ামতের, রহমতের, বেলায়েতের সাগরের সাথে, আহলে-বায়েতের অন্যতম প্রধান দুই আহলে বায়েত হযরত আলী (কঃ) এবং হযরত ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ) কে তুলনা করে, তাঁদের মহান শান ও আজমাতকে যেমনি বান্দার নিকট তুলে ধরেছেন, ঠিক তেমনি অপর দুই আহলে-বায়েত হযরত ঈমাম হাসান (আঃ) ও হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ)'র মহান শান ও আজমাতকে তুলে ধরেছেন বান্দার নিকট মুক্তা ও মানিকের সঙ্গে তুলনা করে।
চলবে...
লেখকঃ এস জি এম চিশতী
Thursday, October 30, 2014
Posted by
Unknown
# আল - ইয়াওমুল - আশুরা (সংকলন) পর্ব - ১
আরবী তথা ইসলামী সাল বা বৎসরের প্রথম মাস মহররম মাস বা শাহরে মহররম (পবিত্র মাস)। “ইসলাম” শব্দের মূল আভিধানিক অর্থ বা মানায়ে লাগবি ‘আত্নসমর্পন করা’; আর ব্যবহারিক অর্থ বা মানায়ে এস্তে-লাহি ‘শান্তি’। আল্লাহপাকের রেজামুন্দি হাসিলের জন্য তাঁর দরবারে আত্ন-ত্যাগ, আত্নোৎসর্গ করে হৃদয়ে বা প্রানে যে প্রশান্তি অনুভূত হয় বা শান্তি লাভ করা যায় তাই ব্যাবহারিক অর্থে ইসলাম। এর জন্য আল্লাহপাক যে জীবন-বিধান প্রদান করেছেন তাই ইসলাম ধর্ম। এরশাদ হচ্ছেঃ
“আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত একমাত্র জীবন-বিধান বা ধর্ম হচ্ছে ইসলাম।”
ইসলাম সূচিত হয়েছে হযরত আদম (আঃ)’র সময়, কাঠামো লাভ করেছে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)’র সময়, আর পরিপূর্নতা লাভ করেছে সরকারে দো-আলম, নাবীয়ে দো-জাহা, সাইয়েদুল মুরসালিন রাসুলে আকরাম (সাঃ আঃ)’র মাধ্যমে। কোরআন মজিদে তাই এরশাদ হচ্ছেঃ
“তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে আজ পরিপূর্ন করলাম এবং তোমাদের জন্য আমার সকল নেয়ামত প্রদানও সম্পন্ন হল।”
আল্লাহ-রাব্বুল আলামিন, যিনি খালেক ও মালেক, তাঁর রেজামুন্দি হাসেল, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আনুগত্য প্রকাশের নিমিত্ত স্বীয় জান-মাল, যথাসর্বস্ব কোরবানি করা বা বিসর্জন দেয়াই হল ইসলামের মূল আদর্শ ও মূল শিক্ষা। তাই ইসলামী সাল বা বৎসরের এবতেদা কোরবানির মাধ্যমে, আর এন্তেহাও কোরবানির মাধ্যমে। ইসলামী বৎসরের প্রথম মাস "মহররম"- যার দশ তারিখ যেমনি বহন করে কোরবানির এক বে-নজির দৃষ্টান্ত, তেমনি বৎসরের শেষ মাস জিলহজ্জ যার দশ তারিখও বহন করে কোরবানির উজ্জল দৃষ্টান্ত। এই উভয় কোরবানি আল্লাহ-পাকের মহান দরবারে এমনিভাবে মাকবুলিয়াত লাভ করেছে যে, তাঁর বান্দাদের জন্য এই উভয় দিনকে তিনি চিরস্মরনীয় করে রেখেছেন।
মহররম মাস বা শাহরে মহররম যার দশ তারিখ বা ইয়াওমুল-আশুরা যুগ যুগ ধরে প্রতিটি মো’মেন নর-নারী, আশেকে-রাসুল, আশেকে-আহলে বায়েত এর প্রানে দোলা দেয়। জাগ্রত করে একদিকে যেমনি এক হৃদয়-বিদারক বেদনাময় স্মৃতিকে, তেমনি জাগ্রত করে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ন্যায় ও সত্যের ঝান্ডাকে উত্তোলন করার জন্য, ন্যায় ও সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এক মহান আত্নত্যাগের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিকে। এই দিনটিতে আশেকের প্রান যেমনি হৃদয় বিদারক সেই স্মৃতির ব্যাথায় ব্যাথিত, ভারাক্রান্ত; তেমনি আত্নত্যাগের সেই গৌরবময় স্মৃতিমন্থনে গর্বিত; আশেক মাশুকের সেই মহা মিলনের আনন্দে আনন্দিত।
ইয়াওমুল-আশুরা বা আশুরার দিনটি যে কেবল ধর্মপ্রান মুসলমান, আশেকে রাসুল, আহলে ইমান এর নিকটেই পূতঃপবিত্র বা মর্তবাপূর্ণ দিনরূপে স্মরনীয় বা স্বীকৃত তা-ই নয়, হযরত আদম (আঃ) এর জমানা হতেই এই দিনটি প্রত্যেক নবীর উম্মতের, ক্বওমের, আহলে ইমানের নিকটিই পুতঃপবিত্র বা মর্তবাপূর্ণ দিনরূপে বিবেচিত বা স্বীকৃত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর হাবীব- সাইয়েদুল মুরসালিন (সমস্ত নবিদের সর্দার), সারওয়ারে-কায়েনাত, রাহমাতুল্লিল-আলামিন হযরত রাসুলে খোদা (সাঃ আঃ) যিনি সমস্ত সৃষ্টির একমাত্র উৎস, তাঁরই নূর – এ – নজর, প্রাণাধিক প্রিয়তম দৌহীত্র হযরত ফাতেমাতুজ জোহরা (রাঃ) এর হৃদয়ের ধন হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ) কে ঐ শহীদগণ, যাঁদের মর্তবা সম্পর্কে আল্লাহপাক কোরআনে মজিদে একাধিক বার উল্লেখ করেছেন, যাঁদের এক কাতরা রক্তের বিনিময়ে ৭০ হাজার গুনাহগার উম্মতে-মুহাম্মাদী নাজাত বা পরিত্রান লাভ করবে, সেই শহীদগনের সর্দার বা “সাইয়েদোশ-শোহাদার” শ্রেষ্ঠতম মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করবেন বলেই এই দিনটি যুগ যুগ ধরে পূতঃপবিত্র ও মর্তবাপূর্ণ দিনরুপে চিহ্নিত হয়ে আসছে। এই দিনটিতে আল্লাহ – রাব্বুল – আলামিন যুগে যুগে তাঁর রহমতের দুয়ার বান্দার জন্য খুলে দিয়েছেন, রহমতের বারিধারা বর্ষিত হয়েছে তাঁর খাস বান্দাদের উপর। এই দিনে কবুল হয়েছে হযরত আদম (আঃ) এর তওবা; উচ্চ মর্তবা লাভ করেছেন হযরত ইদ্রিছ (আঃ); নির্বাপিত হয়েছিলো হযরত ইব্রাহিম (আঃ) যে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তা; কিশতী হতে অবতরন করতে সক্ষম হয়েছিলেন হযরত নূহ (আঃ) এবং তাঁর সঙ্গীগন; তাওরাত কিতাব নাযিল হয়েছিলো হযরত মুসা (আঃ) এর উপর; নীল নদ দ্বিধা বিভক্ত হয়েছিলো বনি ইসরাইলদের জন্য; কয়েদখানা হতে মুক্তি লাভ করেছিলেন হযরত ইউসুফ (আঃ); মাছের পেট হতে বের হতে সক্ষম হয়েছিলেন হযরত ইউনুস (আঃ)। আজও বর্ষিত হয়, আজও খুলে দেন তাঁর রহমতের দুয়ার অগনিত গুনাহগার উম্মতে মুহাম্মাদির নাজাতের জন্য, তাওবা কবুল হওয়ার জন্য। এই দিনটি তাই প্রতি বৎসর ফিরে আসে আমাদের কাছে রহমতের সওগাত নিয়ে।
চলবে...
“আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত একমাত্র জীবন-বিধান বা ধর্ম হচ্ছে ইসলাম।”
ইসলাম সূচিত হয়েছে হযরত আদম (আঃ)’র সময়, কাঠামো লাভ করেছে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)’র সময়, আর পরিপূর্নতা লাভ করেছে সরকারে দো-আলম, নাবীয়ে দো-জাহা, সাইয়েদুল মুরসালিন রাসুলে আকরাম (সাঃ আঃ)’র মাধ্যমে। কোরআন মজিদে তাই এরশাদ হচ্ছেঃ
“তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে আজ পরিপূর্ন করলাম এবং তোমাদের জন্য আমার সকল নেয়ামত প্রদানও সম্পন্ন হল।”
আল্লাহ-রাব্বুল আলামিন, যিনি খালেক ও মালেক, তাঁর রেজামুন্দি হাসেল, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আনুগত্য প্রকাশের নিমিত্ত স্বীয় জান-মাল, যথাসর্বস্ব কোরবানি করা বা বিসর্জন দেয়াই হল ইসলামের মূল আদর্শ ও মূল শিক্ষা। তাই ইসলামী সাল বা বৎসরের এবতেদা কোরবানির মাধ্যমে, আর এন্তেহাও কোরবানির মাধ্যমে। ইসলামী বৎসরের প্রথম মাস "মহররম"- যার দশ তারিখ যেমনি বহন করে কোরবানির এক বে-নজির দৃষ্টান্ত, তেমনি বৎসরের শেষ মাস জিলহজ্জ যার দশ তারিখও বহন করে কোরবানির উজ্জল দৃষ্টান্ত। এই উভয় কোরবানি আল্লাহ-পাকের মহান দরবারে এমনিভাবে মাকবুলিয়াত লাভ করেছে যে, তাঁর বান্দাদের জন্য এই উভয় দিনকে তিনি চিরস্মরনীয় করে রেখেছেন।
মহররম মাস বা শাহরে মহররম যার দশ তারিখ বা ইয়াওমুল-আশুরা যুগ যুগ ধরে প্রতিটি মো’মেন নর-নারী, আশেকে-রাসুল, আশেকে-আহলে বায়েত এর প্রানে দোলা দেয়। জাগ্রত করে একদিকে যেমনি এক হৃদয়-বিদারক বেদনাময় স্মৃতিকে, তেমনি জাগ্রত করে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ন্যায় ও সত্যের ঝান্ডাকে উত্তোলন করার জন্য, ন্যায় ও সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এক মহান আত্নত্যাগের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিকে। এই দিনটিতে আশেকের প্রান যেমনি হৃদয় বিদারক সেই স্মৃতির ব্যাথায় ব্যাথিত, ভারাক্রান্ত; তেমনি আত্নত্যাগের সেই গৌরবময় স্মৃতিমন্থনে গর্বিত; আশেক মাশুকের সেই মহা মিলনের আনন্দে আনন্দিত।
ইয়াওমুল-আশুরা বা আশুরার দিনটি যে কেবল ধর্মপ্রান মুসলমান, আশেকে রাসুল, আহলে ইমান এর নিকটেই পূতঃপবিত্র বা মর্তবাপূর্ণ দিনরূপে স্মরনীয় বা স্বীকৃত তা-ই নয়, হযরত আদম (আঃ) এর জমানা হতেই এই দিনটি প্রত্যেক নবীর উম্মতের, ক্বওমের, আহলে ইমানের নিকটিই পুতঃপবিত্র বা মর্তবাপূর্ণ দিনরূপে বিবেচিত বা স্বীকৃত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর হাবীব- সাইয়েদুল মুরসালিন (সমস্ত নবিদের সর্দার), সারওয়ারে-কায়েনাত, রাহমাতুল্লিল-আলামিন হযরত রাসুলে খোদা (সাঃ আঃ) যিনি সমস্ত সৃষ্টির একমাত্র উৎস, তাঁরই নূর – এ – নজর, প্রাণাধিক প্রিয়তম দৌহীত্র হযরত ফাতেমাতুজ জোহরা (রাঃ) এর হৃদয়ের ধন হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ) কে ঐ শহীদগণ, যাঁদের মর্তবা সম্পর্কে আল্লাহপাক কোরআনে মজিদে একাধিক বার উল্লেখ করেছেন, যাঁদের এক কাতরা রক্তের বিনিময়ে ৭০ হাজার গুনাহগার উম্মতে-মুহাম্মাদী নাজাত বা পরিত্রান লাভ করবে, সেই শহীদগনের সর্দার বা “সাইয়েদোশ-শোহাদার” শ্রেষ্ঠতম মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করবেন বলেই এই দিনটি যুগ যুগ ধরে পূতঃপবিত্র ও মর্তবাপূর্ণ দিনরুপে চিহ্নিত হয়ে আসছে। এই দিনটিতে আল্লাহ – রাব্বুল – আলামিন যুগে যুগে তাঁর রহমতের দুয়ার বান্দার জন্য খুলে দিয়েছেন, রহমতের বারিধারা বর্ষিত হয়েছে তাঁর খাস বান্দাদের উপর। এই দিনে কবুল হয়েছে হযরত আদম (আঃ) এর তওবা; উচ্চ মর্তবা লাভ করেছেন হযরত ইদ্রিছ (আঃ); নির্বাপিত হয়েছিলো হযরত ইব্রাহিম (আঃ) যে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তা; কিশতী হতে অবতরন করতে সক্ষম হয়েছিলেন হযরত নূহ (আঃ) এবং তাঁর সঙ্গীগন; তাওরাত কিতাব নাযিল হয়েছিলো হযরত মুসা (আঃ) এর উপর; নীল নদ দ্বিধা বিভক্ত হয়েছিলো বনি ইসরাইলদের জন্য; কয়েদখানা হতে মুক্তি লাভ করেছিলেন হযরত ইউসুফ (আঃ); মাছের পেট হতে বের হতে সক্ষম হয়েছিলেন হযরত ইউনুস (আঃ)। আজও বর্ষিত হয়, আজও খুলে দেন তাঁর রহমতের দুয়ার অগনিত গুনাহগার উম্মতে মুহাম্মাদির নাজাতের জন্য, তাওবা কবুল হওয়ার জন্য। এই দিনটি তাই প্রতি বৎসর ফিরে আসে আমাদের কাছে রহমতের সওগাত নিয়ে।
চলবে...
লেখকঃ এস জি এম চিশতী
Wednesday, October 29, 2014
Posted by
Unknown
# সালতানাতে মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ষষ্ঠ পর্ব।
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের দ্বীন ও দুনিয়ার মালিক।
এরশাদ হচ্ছেঃ
وما كان لمؤمن ولا مؤمنة اذا قضى الله ورسوله امرا ان يكون لهم الخيرة من امرهم .ومن يعص الله ورسوله فقد ضل ضلالا مبينا .. سورة الاحزاب :اية-٣٦
অর্থাৎ, "এবং না কোন মুসলমান পুরুষ, না কোন মুসলমান নারীর জন্য শোভা পায় যে, যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দেন তখন তাদের নিজ ব্যাপারে কোন ইখতিয়ার থাকবে! এবং যে কেউ নির্দেশ অমান্য করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের, সে নিশ্চই সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পথভ্রষ্ট হয়েছে।" (সূরা - আল আহযাবঃ আয়াত - ৩৬)
শানে নূযুলঃ
হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ আসাদিয়াহ, তাঁর ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ এবং তাঁর মা উমায়মাহ বিনতে আব্দুল মোত্তালিব (হুজুর সাঃ আঃ এর ফুফী)'র প্রসংগে এ আয়াত অবতির্ণ হয়েছে। হুযুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপন পোষ্য পুত্র যায়েদ ইবনে হারিসের সাথে বিয়ের জন্য যয়নবের নিকট পয়গাম(প্রস্তাব) পাঠালেন, যা যয়নব ও অন্যান্য ব্যাক্তিগন গ্রহন করেননি। এ প্রসংগে আয়াত শরীফ অবতির্ণ হয়েছে, যার ফলে যয়নব ও অন্যান্য সকলে রাজি হয়ে গেলেন। আর হযরত যয়নবের বিয়ে হযরত যায়েদের সাথে করিয়ে দেওয়া হলো। (রাদিয়াল্লাহু আনহুম )
উপরোক্ত আয়াতে কারীমা থেকে স্পষ্ট ভাবে বুঝা গেল যে, রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র হুকুমের সামনে সবাইকে মাথা নত করতে হবে। হুযুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র হুকুমের সামনে নিজের ব্যাক্তিগত লেনদেনের ক্ষেত্রেও মুমিনের অধিকার থাকেনা। যদি হুজুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কারো জন্য বিবাহিত স্ত্রীকেও হারাম করে দেন, তবে সেও হারাম হয়ে যাবে।
মাসায়ালাঃ
১। হুযুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র নির্দেশ পালন করা অপরিহার্য।
২। হুযুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতিটি মুমিনের জান মালের মালিক।
৩। হুযুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র নির্দেশ মাতা-পিতার হুকুমের চেয়েও বেশি তাৎপর্য বহন করে।
৪।হুযুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র নির্দেশ মূলত আল্লাহতালারই নির্দেশ। এতে সন্দেহ করাটা পথভ্রষ্টতা।
দেখুন, নারীর অধিকার রয়েছে নিজের বিবাহের ব্যাপারে স্বাধীন মত প্রকাশ করার; কিন্ত, হুজুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র নির্দেশ হলে তার নিজের কোন অধিকার থাকেনা(উপরোক্ত ঘটনার আলোকে)।
মোট কথা, হুজুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দ্বীন ও দুনিয়ার মালিক।
চলবে...
এরশাদ হচ্ছেঃ
وما كان لمؤمن ولا مؤمنة اذا قضى الله ورسوله امرا ان يكون لهم الخيرة من امرهم .ومن يعص الله ورسوله فقد ضل ضلالا مبينا .. سورة الاحزاب :اية-٣٦
অর্থাৎ, "এবং না কোন মুসলমান পুরুষ, না কোন মুসলমান নারীর জন্য শোভা পায় যে, যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দেন তখন তাদের নিজ ব্যাপারে কোন ইখতিয়ার থাকবে! এবং যে কেউ নির্দেশ অমান্য করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের, সে নিশ্চই সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পথভ্রষ্ট হয়েছে।" (সূরা - আল আহযাবঃ আয়াত - ৩৬)
শানে নূযুলঃ
হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ আসাদিয়াহ, তাঁর ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ এবং তাঁর মা উমায়মাহ বিনতে আব্দুল মোত্তালিব (হুজুর সাঃ আঃ এর ফুফী)'র প্রসংগে এ আয়াত অবতির্ণ হয়েছে। হুযুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপন পোষ্য পুত্র যায়েদ ইবনে হারিসের সাথে বিয়ের জন্য যয়নবের নিকট পয়গাম(প্রস্তাব) পাঠালেন, যা যয়নব ও অন্যান্য ব্যাক্তিগন গ্রহন করেননি। এ প্রসংগে আয়াত শরীফ অবতির্ণ হয়েছে, যার ফলে যয়নব ও অন্যান্য সকলে রাজি হয়ে গেলেন। আর হযরত যয়নবের বিয়ে হযরত যায়েদের সাথে করিয়ে দেওয়া হলো। (রাদিয়াল্লাহু আনহুম )
উপরোক্ত আয়াতে কারীমা থেকে স্পষ্ট ভাবে বুঝা গেল যে, রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র হুকুমের সামনে সবাইকে মাথা নত করতে হবে। হুযুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র হুকুমের সামনে নিজের ব্যাক্তিগত লেনদেনের ক্ষেত্রেও মুমিনের অধিকার থাকেনা। যদি হুজুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কারো জন্য বিবাহিত স্ত্রীকেও হারাম করে দেন, তবে সেও হারাম হয়ে যাবে।
মাসায়ালাঃ
১। হুযুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র নির্দেশ পালন করা অপরিহার্য।
২। হুযুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতিটি মুমিনের জান মালের মালিক।
৩। হুযুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র নির্দেশ মাতা-পিতার হুকুমের চেয়েও বেশি তাৎপর্য বহন করে।
৪।হুযুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র নির্দেশ মূলত আল্লাহতালারই নির্দেশ। এতে সন্দেহ করাটা পথভ্রষ্টতা।
দেখুন, নারীর অধিকার রয়েছে নিজের বিবাহের ব্যাপারে স্বাধীন মত প্রকাশ করার; কিন্ত, হুজুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র নির্দেশ হলে তার নিজের কোন অধিকার থাকেনা(উপরোক্ত ঘটনার আলোকে)।
মোট কথা, হুজুর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দ্বীন ও দুনিয়ার মালিক।
চলবে...
# সালতানাতে মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পঞ্চম পর্ব।
যাদের অন্তরসমূহকে আল্লাহ-তায়ালা "তাক্বওয়া " (খোদাভীরুতা) অবলম্বনকারী হিসেবে কবুল করেছেন, তারাই মূলত হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র প্রতি তাজিম ও আদাব প্রদর্শন করে।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফে এরশাদ করেন-
ان الذين يغضون اصواتهم عند رسول الله الئك الذين امتحن الله قلوبهم للتقوى. لهم مغفرة واجر عظيم. . (سورة -الحجرات:اية-٣)
অর্থাৎ, নিশ্চয় ওই সমস্ত লোক, যারা আপন কন্ঠস্বরকে নিচু রাখে আল্লাহর রাসূলের নিকট, তারা হচ্ছে ওই সব লোক যাদের অন্তরকে আল্লাহ তায়ালা খোদাভীরুতার জন্য পরীক্ষা করে নিয়েছেন। তাদের জন্য ক্ষমা ও মহা পুরস্কার রয়েছে। (সূরা - আল হুজরাতঃ আয়াত - ৩)
শানে নূযুলঃ
হযরত আবুবকর সিদ্দীক ও ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহুম আদাব রক্ষার্থে হুজুর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র দরবারে অতিমাত্রায় নিম্নস্বরে আলাপ করতেন। তাদের সুসংবাদ প্রদান করে উক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে।
মাসায়ালাঃ
১। সমস্ত ইবাদাত বান্দেগী শরীরের জন্য তাক্বওয়া, আর হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি আদব করা অন্তরের তাক্বওয়া।
২। সাহাবায়ে কেরামগণের মহান হৃদয় ও হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র প্রতি আদাব রক্ষাকারী সকল মুমিন বান্দাদের অন্তরকে আল্লাহ-তায়ালা তাক্বওয়ার জন্য যাচাই-বাছাই করে নিয়েছেন।
৩। হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র প্রতি আদাব প্রদর্শনকারীদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার। এমন পুরস্কার যা কেউ কল্পনাও করতে পারবেনা।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর হাবিব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র উছিলায় ক্ষমা ও মহা পুরস্কার লাভের সৌভাগ্য নসিব করুন। আমিন!
চলবে...
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফে এরশাদ করেন-
ان الذين يغضون اصواتهم عند رسول الله الئك الذين امتحن الله قلوبهم للتقوى. لهم مغفرة واجر عظيم. . (سورة -الحجرات:اية-٣)
অর্থাৎ, নিশ্চয় ওই সমস্ত লোক, যারা আপন কন্ঠস্বরকে নিচু রাখে আল্লাহর রাসূলের নিকট, তারা হচ্ছে ওই সব লোক যাদের অন্তরকে আল্লাহ তায়ালা খোদাভীরুতার জন্য পরীক্ষা করে নিয়েছেন। তাদের জন্য ক্ষমা ও মহা পুরস্কার রয়েছে। (সূরা - আল হুজরাতঃ আয়াত - ৩)
শানে নূযুলঃ
হযরত আবুবকর সিদ্দীক ও ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহুম আদাব রক্ষার্থে হুজুর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র দরবারে অতিমাত্রায় নিম্নস্বরে আলাপ করতেন। তাদের সুসংবাদ প্রদান করে উক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে।
মাসায়ালাঃ
১। সমস্ত ইবাদাত বান্দেগী শরীরের জন্য তাক্বওয়া, আর হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি আদব করা অন্তরের তাক্বওয়া।
২। সাহাবায়ে কেরামগণের মহান হৃদয় ও হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র প্রতি আদাব রক্ষাকারী সকল মুমিন বান্দাদের অন্তরকে আল্লাহ-তায়ালা তাক্বওয়ার জন্য যাচাই-বাছাই করে নিয়েছেন।
৩। হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র প্রতি আদাব প্রদর্শনকারীদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার। এমন পুরস্কার যা কেউ কল্পনাও করতে পারবেনা।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর হাবিব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র উছিলায় ক্ষমা ও মহা পুরস্কার লাভের সৌভাগ্য নসিব করুন। আমিন!
চলবে...
# সালতানাতে মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চতুর্থ পর্ব।
রাসূলে খোদা হযরত মোহাম্মাদ মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) 'র শানে বে- আদবী করা কুফরী।
আল্লাহ-তায়ালা পবিত্র কালামে মাজিদে এরশাদ করেন-
يايها الذين امنوا لا ترفعوا اصواتكم فوق صوت النبى ولا تجهروا له بالقول كجهر بعضكم لبعض ان تحبط اعمالكم وانتم لا تشعرون. .
অর্থাৎ, "হে ঈমানদারগণ ! নিজেদের কন্ঠস্বরকে উঁচু করোনা ওই অদৃশ্যের সংবাদদাতা (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র কন্ঠস্বরের উপর, এবং তিনির সামনে চিৎকার করে কথা বলোনা, যেভাবে পরস্পরের মধ্যে একে অপরের সামনে চিৎকার করো, যেন তোমাদের কর্মসমুহ নিষ্ফল না হয়ে যায় আর তোমাদের খবর থাকবেনা।" (সূরা - হুজরাতঃ আয়াত- ২)
উপরোক্ত আয়াতের শানে নূযুলঃ
এ আয়াত হযরত সাবিত ইবনে ক্বায়স ইবনে শাম্মাস (রাঃ)'র প্রসংগে অবতির্ণ হয়েছে। যিনি কিছুটা উচ্চ স্বর শুনতেন এবং নিজেও বলতেন উচ্চ কন্ঠে। তাকে নির্দেশ দেওয়া হলো যেন দরবারে মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এ তার আওয়াজকে নিচু রাখেন। হযরত সাবিত (রাঃ) এ আয়াত শরিফ নাযিল হওয়ার পর ঘর থেকে বের হচ্ছিলেন না। তিনি নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে ফেললেন। হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র দরবারে হাজির হলেন না। হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত সা'আদ (রাঃ)কে তাঁর অনুপস্থিতির কারণ জিজ্ঞাসা করলেন, সা'আদ (রাঃ)ছিলেন সাবিত ইবনে ক্বাইস (রাঃ)'র প্রতিবেশী। সা'আদ (রাঃ) সাবিত ইবনে ক্বাইস (রাঃ)কে জিজ্ঞাস করলেন, সাবিত (রাঃ) বললেন "আমিতো দোযখী হয়ে গেছি, আমার কন্ঠস্বর উঁচু হয়ে গিয়েছিলো।" হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর এ কথা শুনে এরশাদ ফরমালেন, "তাকে বলে দাও! সে জান্নাতি।"
উপরোক্ত আয়াত নাযিল হয়ার পর থেকে সকল সাহাবাগণ এত আস্তে কথা বলা শুরু করলেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনেক সময় একটি কথা কয়েকবার জিজ্ঞেস করতেন।
মাসায়ালাঃ
১। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র দরবারে চিৎকার, চেচামেচি করা যাবে না।
২। এমন কোন সাধারণ উপাধিতে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সম্বোধন করা যাবেনা যে সকল উপাধি দ্বারা আমরা একে অপরকে সম্বোধন করি। যেমনঃ চাচা, বাবা, ভাই, মানুষ ইত্যাদি। তিনিকে আদাবের সাথে সম্বোধন করতে হবে রাসূলুল্লাহ, হাবীবুল্লাহ, শাফিউল মুজনিবিন, রাহমাতাল্লিল আলামিন ইত্যাদি উপাধিতে।
৩। হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র প্রতি সামান্যতম বে-আদবি করাও কুফরী। কেননা, কুফরীর কারনেই নেকীগুলো বরবাদ হয়ে যায়। আর হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র দরবারে উচ্চস্বরে কথা বলার ফলে নেকীগুলো বরবাদ হয়ে যায়।
(মনে রাখতে হবে কোন ধরনের অন্যায় কাজের জন্য আমাদের আমলনামায় গুনাহ লিখা হয়; কিন্ত নেকি / সাওয়াব বরবাদ হয়না। শুধুমাত্র যদি কেউ কুফরী করে অর্থাৎ ঈমান হারা হয়ে যায় ; তবেই তার নেকি / সাওয়াবসমুহ বরবাদ হয়ে যায়।)
আল্লাহ-তায়ালা আমাদের সকলকে তাঁর হাবিবের শানে বে- আদাবী মূলক কার্যকলাপ থেকে হেফাজত করুন।এবং তাঁর হাবিবের প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি করুন।
আমিন!
চলবে...
আল্লাহ-তায়ালা পবিত্র কালামে মাজিদে এরশাদ করেন-
يايها الذين امنوا لا ترفعوا اصواتكم فوق صوت النبى ولا تجهروا له بالقول كجهر بعضكم لبعض ان تحبط اعمالكم وانتم لا تشعرون. .
অর্থাৎ, "হে ঈমানদারগণ ! নিজেদের কন্ঠস্বরকে উঁচু করোনা ওই অদৃশ্যের সংবাদদাতা (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র কন্ঠস্বরের উপর, এবং তিনির সামনে চিৎকার করে কথা বলোনা, যেভাবে পরস্পরের মধ্যে একে অপরের সামনে চিৎকার করো, যেন তোমাদের কর্মসমুহ নিষ্ফল না হয়ে যায় আর তোমাদের খবর থাকবেনা।" (সূরা - হুজরাতঃ আয়াত- ২)
উপরোক্ত আয়াতের শানে নূযুলঃ
এ আয়াত হযরত সাবিত ইবনে ক্বায়স ইবনে শাম্মাস (রাঃ)'র প্রসংগে অবতির্ণ হয়েছে। যিনি কিছুটা উচ্চ স্বর শুনতেন এবং নিজেও বলতেন উচ্চ কন্ঠে। তাকে নির্দেশ দেওয়া হলো যেন দরবারে মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এ তার আওয়াজকে নিচু রাখেন। হযরত সাবিত (রাঃ) এ আয়াত শরিফ নাযিল হওয়ার পর ঘর থেকে বের হচ্ছিলেন না। তিনি নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে ফেললেন। হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র দরবারে হাজির হলেন না। হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত সা'আদ (রাঃ)কে তাঁর অনুপস্থিতির কারণ জিজ্ঞাসা করলেন, সা'আদ (রাঃ)ছিলেন সাবিত ইবনে ক্বাইস (রাঃ)'র প্রতিবেশী। সা'আদ (রাঃ) সাবিত ইবনে ক্বাইস (রাঃ)কে জিজ্ঞাস করলেন, সাবিত (রাঃ) বললেন "আমিতো দোযখী হয়ে গেছি, আমার কন্ঠস্বর উঁচু হয়ে গিয়েছিলো।" হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর এ কথা শুনে এরশাদ ফরমালেন, "তাকে বলে দাও! সে জান্নাতি।"
উপরোক্ত আয়াত নাযিল হয়ার পর থেকে সকল সাহাবাগণ এত আস্তে কথা বলা শুরু করলেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনেক সময় একটি কথা কয়েকবার জিজ্ঞেস করতেন।
মাসায়ালাঃ
১। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র দরবারে চিৎকার, চেচামেচি করা যাবে না।
২। এমন কোন সাধারণ উপাধিতে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সম্বোধন করা যাবেনা যে সকল উপাধি দ্বারা আমরা একে অপরকে সম্বোধন করি। যেমনঃ চাচা, বাবা, ভাই, মানুষ ইত্যাদি। তিনিকে আদাবের সাথে সম্বোধন করতে হবে রাসূলুল্লাহ, হাবীবুল্লাহ, শাফিউল মুজনিবিন, রাহমাতাল্লিল আলামিন ইত্যাদি উপাধিতে।
৩। হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র প্রতি সামান্যতম বে-আদবি করাও কুফরী। কেননা, কুফরীর কারনেই নেকীগুলো বরবাদ হয়ে যায়। আর হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র দরবারে উচ্চস্বরে কথা বলার ফলে নেকীগুলো বরবাদ হয়ে যায়।
(মনে রাখতে হবে কোন ধরনের অন্যায় কাজের জন্য আমাদের আমলনামায় গুনাহ লিখা হয়; কিন্ত নেকি / সাওয়াব বরবাদ হয়না। শুধুমাত্র যদি কেউ কুফরী করে অর্থাৎ ঈমান হারা হয়ে যায় ; তবেই তার নেকি / সাওয়াবসমুহ বরবাদ হয়ে যায়।)
আল্লাহ-তায়ালা আমাদের সকলকে তাঁর হাবিবের শানে বে- আদাবী মূলক কার্যকলাপ থেকে হেফাজত করুন।এবং তাঁর হাবিবের প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি করুন।
আমিন!
চলবে...
# সালতানাতে মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৃতীয় পর্ব।
স্বয়ং আল্লাহতালাই হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র প্রতি আদাব শিক্ষাদানকারী।
মহান রাব্বুল আলামিন সারোয়ারে কায়েনাত, রাহমাতাল্লিল আলামিন, হুজুর পুর নুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র মহানতম শানপাক-এ বিন্দু পরিমান বেয়াদবি বরদাস্ত করেন না। তাই তিনি স্বয়ং বান্দাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন, কিভাবে তিনির হাবিব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র খেদমতে আদাব বজায় রাখতে হয়।
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন - ياايهاالذين امنوا لا تقدموا بين يدى الله ورسوله واتقوا الله ان الله سميع عليم.
- হে ঈমানদারগণ ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আগে বাড়বে না এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চই আল্লাহ সমস্ত কিছু জানেন ও শুনেন। ( সূরা - আল হুজরাতঃ আয়াত- ০১)
উপরোক্ত আয়াতের শানে নূযুলঃ
কিছু সংখক সাহাবী ঈদুল আযহার দিনে হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র পূর্বে, অর্থাৎ ঈদের নামাযের পূর্বে কোরবানি করে ফেলেছেন। কিছু সংখক সাহাবী রমযানের একদিন আগেই, অর্থাৎ হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোযা শুরু করার পূর্বেই রোযা রাখা শুরু করে দিতেন। তাদের প্রসংগে এ আয়াত শরিফ অবতির্ণ হয়েছে।
উপরোক্ত আয়াত শরিফ থেকে কতিপয় মাসালা প্রতীয়মান হয়ঃ
১। হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র প্রতি বেয়াদবি প্রদর্শন করা আল্লাহর প্রতি বেয়াদবি প্রদর্শন করার শামিল।
২। রাস্তায় চলা ও কথাবার্তা বলায় হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র অগ্রবর্তী হওয়া নিষেধ।
৩। সম্মানিত কোন কিছুর দিকে পিঠ ফিরানো আদাবের খেলাফ। যেমনঃ কা'বাঘর, রাসুলে কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র রওজা শরিফ, কোরান শরিফ, কোন পীর, অলী, বুজুর্গ ব্যাক্তি, নবী -অলীগনের মাযার শরিফ বা সম্মানিত কোন স্থানের দিকে পিঠ না ফেরানো।
# আয়াতাংশে উল্লেখিত - "নিশ্চই আল্লাহ সমস্ত কিছু শুনেন ও জানেন" বাক্য দ্বারা সকল ঈমানদারগণকে সতর্ক করেছেন যে, "খবরদার! আমার হাবিবের প্রতি যেন কোন বে-আদবি না হয়, আমার রাসূলের দরবারে তোমাদের প্রতিটি কাজকর্ম ও ওঠাবসা আমি প্রত্যক্ষ করছি। তোমরা আমার হাবিবের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন কর।"
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তিনির হাবিবের প্রতি চিরন্তন আদাব ও ভালোবাসা দান করুন। আমিন!
চলবে...
# সালতানাতে মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বিতীয় পর্ব।
হুজুর পুর নূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র প্রতি আদব প্রদর্শন করাই হলো ঈমানের স্তম্ভ।
মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরান শরীফে এরশাদ করেন-
لتئومنوا بالله ورسوله وتعزروه وتوقروه وتسبحوه بكرة واصىلا
অর্থাৎ, হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর ঈমান আনো, এবং রাসূলের মহত্ব বর্ণনা ও (তার প্রতি)সম্মান প্রদর্শন করো,আর সকাল সন্ধা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষনা করো!(সূরা - ফাতাহঃ আয়াত-০৯)
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তিনটি আদেশ দান করেছেন,
১। ঈমান আনো (আল্লাহ ও তিনির রাসুল সাঃ এর প্রতি)।
২। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মহত্ব বর্ণনা করো, এবং তিনির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো, অর্থাৎ আদব ও বিনয়ের সাথে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) 'র সম্মুখীন হও।
৩। সকাল - সন্ধা আল্লাহর ইবাদত কর।
এখানে দেখা যাচ্ছে যে, 'ঈমানের' পরবর্তি অবস্থান হচ্ছে 'আদব' আর ইবাদতের অবস্থান হচ্ছে আদবের পরে। অর্থাৎ, ঈমান গ্রহন করার পর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র প্রতি আদব ব্যাতিত কোন ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হবেনা ; বরং আদব ব্যাতিত 'ঈমান'-ই আল্লাহর দরবারে গ্রহণীয় নয়। সুতরাং আদবই হচ্ছে ঈমানের মুল স্তম্ভ। আল্লাহ তায়ালা আমদেরকে তিনির রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র প্রতি যথাযত আদব প্রদর্শন করার তাওফিক দান করুন।আমিন!
চলবে...
মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরান শরীফে এরশাদ করেন-
لتئومنوا بالله ورسوله وتعزروه وتوقروه وتسبحوه بكرة واصىلا
অর্থাৎ, হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর ঈমান আনো, এবং রাসূলের মহত্ব বর্ণনা ও (তার প্রতি)সম্মান প্রদর্শন করো,আর সকাল সন্ধা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষনা করো!(সূরা - ফাতাহঃ আয়াত-০৯)
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তিনটি আদেশ দান করেছেন,
১। ঈমান আনো (আল্লাহ ও তিনির রাসুল সাঃ এর প্রতি)।
২। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মহত্ব বর্ণনা করো, এবং তিনির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো, অর্থাৎ আদব ও বিনয়ের সাথে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) 'র সম্মুখীন হও।
৩। সকাল - সন্ধা আল্লাহর ইবাদত কর।
এখানে দেখা যাচ্ছে যে, 'ঈমানের' পরবর্তি অবস্থান হচ্ছে 'আদব' আর ইবাদতের অবস্থান হচ্ছে আদবের পরে। অর্থাৎ, ঈমান গ্রহন করার পর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র প্রতি আদব ব্যাতিত কোন ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হবেনা ; বরং আদব ব্যাতিত 'ঈমান'-ই আল্লাহর দরবারে গ্রহণীয় নয়। সুতরাং আদবই হচ্ছে ঈমানের মুল স্তম্ভ। আল্লাহ তায়ালা আমদেরকে তিনির রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র প্রতি যথাযত আদব প্রদর্শন করার তাওফিক দান করুন।আমিন!
চলবে...
# সালতানাতে মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথম পর্ব।
দুনিয়াবি রাজা - বাদশাহগন তাদের দরবারের
আদব-কায়দা এবং দরবারে হাজির হওয়ার নিয়ম কানুন নিজেরাই প্রনয়ন
করেন,অর্থাৎ আমার দরবারে আসলে এভাবে দাঁড়াও, এভাবে কথা বল, এভাবে সালাম
কর ইত্যাদি এবং তাদের কর্মচারীদের মাধ্যমে প্রজাগণকে সেগুলো মানতে বাধ্য
করেন। যারা এসব নিয়ম কানুন মেনে চলে, বাদশা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং
যারা এর বিপরীত করে, তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন। তাদের এসব আইন-কানুন কেবল
মানুষের উপর প্রযোজ্য; জ্বীন, ফেরেশতা ও অন্যান্য জীব -জন্তুর উপর
প্রযোজ্য হয়না। কেননা এদের উপর দুনিয়ার রাজা-বাদশাদের কোন কর্তৃত্ব নেই।
তাছাড়া এসব আইন-কানুন বাদশা যতদিন জীবিত থাকেন, ততদিন পর্যন্ত বলবৎ থাকে।
বাদশা'র চোখ বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে দরবার শেষ এবং সমস্ত আইন-কানুনও বিলুপ্ত
হয়ে যায়। আবার গড়ে ওঠে নতুন দরবার,নতুন আইন-কানুন।
"এ দুনিয়াতে প্রত্যেকে এসে নতুন প্রাসাদ গড়ে তোলে, কিছুদিন পর সেটা ফেলে চলে যায়,আবার অন্যজন এসে সেটা আবাদ করে।"
আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিজগতের মধ্যে এমন একটি দরবার আছে যার আদব-কায়দা, হাজির হওয়া ও সালাম কালাম করার নিয়ম কানুন স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালা প্রনয়ন করেছেন। স্বীয় সৃষ্টিকূলকে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন- "হে আমার বান্দাগণ! যখন এ দরবারে আসবে তখন এ নিয়ম-কানুন মেনে চলবে। অন্যথায় তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।" সেটা এমন এক মহান শাহান শাহের দরবার যেখানে ফেরেশতাকূল বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করেনা, জ্বীন জাতি শির নত করে প্রবেশ করে, জীব- জন্তু সেই শাহান-শাহকে সেজদা করে, নিষ্প্রান পাথরের টুকরা, গাছ-পালা তারই কালেমা পড়ে এবং তারই নির্দেশে এগিয়ে আসে, চন্দ্র সূর্য তারই ইশারায় চলে, বৃষ্টি বর্ষিত হয়, বৃষ্টি বন্ধ হয়, মোটকথা আসমান যমিনের সমস্ত কিছু তার হুকুমের আওতাধীন।
সেই দরবারটি কার? কে সেই শাহান শাহ?
তিনি হাবীবুল্লাহ, উভয় জগতের মুখতার, শাহান শাহে কাওনাইন, শাফিউল মুজনাবীন, সারওয়ারে কায়েনাত, ফখরে মউজুদাত, ইমামুল মুরছালিন,খাতামুন নাবীইন, রাহমাতাল্লিল আলামিন, হুযুর পুর নূর হযরত আহমাদানিল মুজতবা, মুহাম্মাদানিল মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
চলবে...
(বিঃদ্রঃ উপরোক্ত বক্তব্য কারো মন গড়া নয়। এর কোরান ও হাদিস ভিত্তিক আলোচনা পরবর্তি পোস্টে পর্যায়ক্রমে পেশ করা হবে।)
"এ দুনিয়াতে প্রত্যেকে এসে নতুন প্রাসাদ গড়ে তোলে, কিছুদিন পর সেটা ফেলে চলে যায়,আবার অন্যজন এসে সেটা আবাদ করে।"
আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিজগতের মধ্যে এমন একটি দরবার আছে যার আদব-কায়দা, হাজির হওয়া ও সালাম কালাম করার নিয়ম কানুন স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালা প্রনয়ন করেছেন। স্বীয় সৃষ্টিকূলকে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন- "হে আমার বান্দাগণ! যখন এ দরবারে আসবে তখন এ নিয়ম-কানুন মেনে চলবে। অন্যথায় তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।" সেটা এমন এক মহান শাহান শাহের দরবার যেখানে ফেরেশতাকূল বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করেনা, জ্বীন জাতি শির নত করে প্রবেশ করে, জীব- জন্তু সেই শাহান-শাহকে সেজদা করে, নিষ্প্রান পাথরের টুকরা, গাছ-পালা তারই কালেমা পড়ে এবং তারই নির্দেশে এগিয়ে আসে, চন্দ্র সূর্য তারই ইশারায় চলে, বৃষ্টি বর্ষিত হয়, বৃষ্টি বন্ধ হয়, মোটকথা আসমান যমিনের সমস্ত কিছু তার হুকুমের আওতাধীন।
সেই দরবারটি কার? কে সেই শাহান শাহ?
তিনি হাবীবুল্লাহ, উভয় জগতের মুখতার, শাহান শাহে কাওনাইন, শাফিউল মুজনাবীন, সারওয়ারে কায়েনাত, ফখরে মউজুদাত, ইমামুল মুরছালিন,খাতামুন নাবীইন, রাহমাতাল্লিল আলামিন, হুযুর পুর নূর হযরত আহমাদানিল মুজতবা, মুহাম্মাদানিল মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
চলবে...
(বিঃদ্রঃ উপরোক্ত বক্তব্য কারো মন গড়া নয়। এর কোরান ও হাদিস ভিত্তিক আলোচনা পরবর্তি পোস্টে পর্যায়ক্রমে পেশ করা হবে।)
# আউলিয়া কেরাম, ছালেহীন ও ওলামাগণের কবরের উপর গুম্বুজ স্থাপন করা, তাদের মাযারের উপর সামিয়ানা টানানো, গিলাফ চড়ানো এবং ঝালর বাতি, প্রদ্বীপ ইত্যাদি জ্বালানো শরিয়ত মতে বৈধ বা জায়েজ ।
প্রশ্নঃ আউলিয়া কেরাম, ছালেহীন ও ওলামাগণের
কবরের উপর গম্বুজ স্থাপন করা, তাদের মাযারের উপর সামিয়ানা টানানো, গিলাফ
চড়ানো এবং ঝালর বাতি ও প্রদ্বীপ ইত্যাদি জ্বালানো শরিয়ত মতে বৈধ / জায়েজ কি
?
উত্তরঃ আউলিয়া কেরাম, ছালেহীন ও ওলামাগণের কবরের উপর গুম্বুজ স্থাপন করা, তাদের মাযারের উপর সামিয়ানা টানানো, গিলাফ চড়ানো এবং ঝালর বাতি, প্রদ্বীপ ইত্যাদি জ্বালানো শরিয়ত মতে বৈধ বা জায়েজ ।
দলিলঃ সূরা-তাওবার ১৮নং আয়াত اِنَّمَا یَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللّٰہِ এর তাফসীর করতে যেয়ে তাফসীরে রুহুল বায়ানের মধ্যে আল্লামা ইসমাঈল হক্কী (রহঃ) বর্ণনা করেন যে-
فَبِنَاءَ الْقُبَّابِ عَلٰی قُبُوْرِ الْعُلَمَاءِ وَالْاَوْلِیَاءِ وَالصُّلَحَاءِ وَوَضَعَ السُّتُوْرَ وَالْعَمَاءِمِ وَالثِیَابِ عَلٰی قُبُوْرِہِمْ اَمْرٌ جَاءِزٌ اِذَا کَانَ الْقَصْدُ بِذٰلِکَ التَّعْظِیْمِ فِیْ اَعْیُنِ الْعَامَّۃِ حَتّٰی لَا یَحْتَقِرُوْا صَاحِبُ ہٰذَا الْقَبْرِ وَکَذَا اِیْقَادُ الْقَنَادِیْلٍ وَالشَّمْعِ عِنْدَ قُبُوْرٍ الْاَوْلِیَاءِ وَالصُّلَحَاءِ مِنْ بَابِ التَّعْظِیْمِ وَالْاِجْلَالِ اَیْضًا لِلْاَوْلِیَاءِ فَالْمَقْصُوْدُ فِیْہَا مَقْصَدٌ حَسَنٌ وَنَذَرَ الزَّیْتَ وَالشًّمْعَ لِلْاَوْلِیَاءِ یُوْقَدُ عِنْدَ قُبُوْرِہِمْ تَعْظِیْمًا لَہُمْ وَمُحَبَّۃً فِیْہِمْ جَاءِزٌ اَیْضًا لَا یَنْبَغِیْ النَّہِیَ عَنْہُ
[تفسیر روح البیان : (سورۃ : التوبۃ ایۃ : ۱۸) جلد ۳ /صفحۃ ۱۶۶۶/ہجری : ۱۴۲۶ ۱۴۲۷ 249 عسائی : ۲۰۰۶ / بیروت 249 لبنان ]
অর্থাৎ, আউলিয়া কেরাম, ছালেহীন ও ওলামাগণের কবরের উপরে গুম্বুজ স্থাপন করা এবং সাধারণ লোকজন যেন মাযারস্ত আউলিয়াগণকে হীন মনে না করে, এই উদ্দেশ্যে তাঁদের মাযার সমূহে সামিয়ানা, পাগড়ী ও গিলাফ দ্বারা আবৃত করা (শরিয়ত মতে) বৈধ বা জায়েজ । অনুরুপভাবে সম্মান ও মর্যদা প্রদর্শনার্থে আউলিয়ায়ে কেরাম ও ছালেহীন গনের মাযারের উপর ঝালর বাতি লটকানো ও প্রদ্বীপ জ্বালানো জায়েজ । কেননা এ কাজের উদ্দেশ্য মহৎ । আউলিয়া কেরামের মাযারে জ্বালানোর উদ্দেশ্য তৈল ও প্রদিপ মান্নত করাও জায়েজ । কেননা, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে মাযারের অলিগণের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ও তাঁদের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন । এই কাজে নিষেধ করা বা বাধা দেয়া অনুচিৎ । তাফসীরে রুহুল বায়ানঃ (সূরা - আত্ তাওবাঃ আয়াত - ১৮) ৩য় খণ্ড, ১৬৬৬ পৃষ্ঠা, (১৮২৬ – ২৭ হিজরী, ২০০৬ খৃষ্টাব্দ, বাইরুত, লেবানন ছাপা)।
উত্তরঃ আউলিয়া কেরাম, ছালেহীন ও ওলামাগণের কবরের উপর গুম্বুজ স্থাপন করা, তাদের মাযারের উপর সামিয়ানা টানানো, গিলাফ চড়ানো এবং ঝালর বাতি, প্রদ্বীপ ইত্যাদি জ্বালানো শরিয়ত মতে বৈধ বা জায়েজ ।
দলিলঃ সূরা-তাওবার ১৮নং আয়াত اِنَّمَا یَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللّٰہِ এর তাফসীর করতে যেয়ে তাফসীরে রুহুল বায়ানের মধ্যে আল্লামা ইসমাঈল হক্কী (রহঃ) বর্ণনা করেন যে-
فَبِنَاءَ الْقُبَّابِ عَلٰی قُبُوْرِ الْعُلَمَاءِ وَالْاَوْلِیَاءِ وَالصُّلَحَاءِ وَوَضَعَ السُّتُوْرَ وَالْعَمَاءِمِ وَالثِیَابِ عَلٰی قُبُوْرِہِمْ اَمْرٌ جَاءِزٌ اِذَا کَانَ الْقَصْدُ بِذٰلِکَ التَّعْظِیْمِ فِیْ اَعْیُنِ الْعَامَّۃِ حَتّٰی لَا یَحْتَقِرُوْا صَاحِبُ ہٰذَا الْقَبْرِ وَکَذَا اِیْقَادُ الْقَنَادِیْلٍ وَالشَّمْعِ عِنْدَ قُبُوْرٍ الْاَوْلِیَاءِ وَالصُّلَحَاءِ مِنْ بَابِ التَّعْظِیْمِ وَالْاِجْلَالِ اَیْضًا لِلْاَوْلِیَاءِ فَالْمَقْصُوْدُ فِیْہَا مَقْصَدٌ حَسَنٌ وَنَذَرَ الزَّیْتَ وَالشًّمْعَ لِلْاَوْلِیَاءِ یُوْقَدُ عِنْدَ قُبُوْرِہِمْ تَعْظِیْمًا لَہُمْ وَمُحَبَّۃً فِیْہِمْ جَاءِزٌ اَیْضًا لَا یَنْبَغِیْ النَّہِیَ عَنْہُ
[تفسیر روح البیان : (سورۃ : التوبۃ ایۃ : ۱۸) جلد ۳ /صفحۃ ۱۶۶۶/ہجری : ۱۴۲۶ ۱۴۲۷ 249 عسائی : ۲۰۰۶ / بیروت 249 لبنان ]
অর্থাৎ, আউলিয়া কেরাম, ছালেহীন ও ওলামাগণের কবরের উপরে গুম্বুজ স্থাপন করা এবং সাধারণ লোকজন যেন মাযারস্ত আউলিয়াগণকে হীন মনে না করে, এই উদ্দেশ্যে তাঁদের মাযার সমূহে সামিয়ানা, পাগড়ী ও গিলাফ দ্বারা আবৃত করা (শরিয়ত মতে) বৈধ বা জায়েজ । অনুরুপভাবে সম্মান ও মর্যদা প্রদর্শনার্থে আউলিয়ায়ে কেরাম ও ছালেহীন গনের মাযারের উপর ঝালর বাতি লটকানো ও প্রদ্বীপ জ্বালানো জায়েজ । কেননা এ কাজের উদ্দেশ্য মহৎ । আউলিয়া কেরামের মাযারে জ্বালানোর উদ্দেশ্য তৈল ও প্রদিপ মান্নত করাও জায়েজ । কেননা, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে মাযারের অলিগণের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ও তাঁদের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন । এই কাজে নিষেধ করা বা বাধা দেয়া অনুচিৎ । তাফসীরে রুহুল বায়ানঃ (সূরা - আত্ তাওবাঃ আয়াত - ১৮) ৩য় খণ্ড, ১৬৬৬ পৃষ্ঠা, (১৮২৬ – ২৭ হিজরী, ২০০৬ খৃষ্টাব্দ, বাইরুত, লেবানন ছাপা)।
# খারেজি, মৌদুদী, ওহাবিদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও তাদের কতিপয় আক্বিদা এবং তার প্রতিবাদ - (লেখকঃ এস জি এম চিশতী)
ডাউনলোড লিংকঃ ক্লিক করুন
আকীদাসমূহ আলাদা লিঙ্কে পড়ুনঃ
# ১নং আকিদাঃ হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ)- কে বড় ভাই-এর সমতুল্যসম্মান করা চাই। এর বেশী করা শিরক।
# ২নং আকীদাঃ হযরত নবী করিম (সাঃ) হায়াতুন্নাবি নন। তাঁর পবিত্র দেহ মাটির সাথে মিশে গেছে।
# ৩নং আকিদাঃ আল্লাহ ভিন্ন কারো নিকট, কোন নবী ও ওলীর নিকট সাহায্য চাওয়া বা তাদের উছিলা ধরা শিরক।
# ৪নং আকিদাঃ হযরত নবী করিম (সাঃ) গায়েব জানেন না, তিনি যে গায়েব জানেন তা বিশ্বাস করা শিরক এবং তিনি উম্মতের শাফায়াতকারীও নন।
# ৫নং আকিদাঃ হযরত নবী করিম (সাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে "ইয়া নবী বা ইয়া রাসুলাল্লাহ" বলা শিরক ও কুফরী।
# ৬নং আকিদাঃ কোন মৃত ব্যাক্তির উদ্দেশ্যে বা কোন উপলক্ষ্যে "মিলাদুন্নবী" মাহফিল করা এবং মিলাদে কিয়াম করা নাজায়েজ এবং বেদাত।
# ৭নং আকিদাঃ দ্বীনের আসল মকছুদ 'ইসলামী হুকুমত'। নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি সমস্ত ইবাদতই উক্ত মকছুদ অর্জনের মাধ্যম।
# ৮নং আকিদাঃ (ক) নবীগণ মাছুম নন, প্রত্যেক নবী গুনাহ করেছেন। (খ) মহানবী (সাঃ) নিজের মনগড়া কথা বলেছেন এবং তিনি নিজের কথায় নিজেই সন্দেহ পোষণ করেছেন।
# ৯নং আকিদাঃ হুযুর পাক (সাঃ) মানবীয় দুর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না।
# ১০নং আকিদাঃ (ক) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)'র রওজা শরীফ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা শিরক। (খ) কবর অথবা মাযার যিয়ারতের জন্য দূর থেকে সফর করতে যাওয়া প্রকাশ্য শিরক। (গ) দূর-দূরান্ত থেকে আউলিয়া কেরামের মাজার যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করে তথায় পৌছামাত্রই শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।
# ১১নং আকিদাঃ মিলাদ, উরছ, আশুরা শরীফ ইত্যাদি অনুষ্ঠানের নেয়াজ বা তবাররুক খাওয়া ও গ্রহণ করা না জায়েজ।
Friday, August 1, 2014
Posted by
SIRAAJAM MUNIRA
# হযরত নবী করিম (সাঃ) গায়েব জানেন, এবং তিনিই উম্মতের শাফায়াতকারী।
হযরত নবী করিম (সাঃ) গায়েব জানেন, এবং তিনিই উম্মতের শাফায়াতকারীঃ
অবশ্যই
আল্লাহরাব্বুল ইজ্জত আলেমুল গায়েব। তিনি
একমাত্র অতুলনীয় ও অবর্ণনীয় সমুদয় এলেম বা জ্ঞানের অধিকারী। এলমে
গায়েব দুই প্রকার - ‘এলমে গায়েব জাতি’ ও ‘এলমে গায়েব আতায়ী’। কোরআনপাকে
যে সকল আয়াতে এলমে গায়েবকে আল্লাহর জাতেপাক ভিন্ন অন্য কারো জন্য অস্বীকার করা হয়েছে, উহা ‘এলমে গায়েব জাতি’ এবং যে সকল আয়াতে পয়গাম্বরগণের এলমে গায়েব লাভের কথা বর্ণিত হয়েছে, উহা ‘এলমে গায়েব আতায়ী’ যা আল্লাহ্পাক স্বীয় অনুগ্রহে তাঁর খাছ বান্দা পয়গম্বর, আউলীয়াআল্লাহ্ ও সালেহীনগণকে প্রদান করে থাকেন। এরশাদ
হচ্ছেঃ
অর্থাৎ,
“আল্লাহ্ আলেমুল গায়েব, তিনি তাঁর মনোনীত রাসূলগণ ব্যতীত অন্য কারো নিকট তাঁর গায়েব প্রকাশ করেন না।” (সূরা
- আল্-জ্বিন : আয়াত - ২৬, ২৭)
হযরত
নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমানঃ
অর্থাৎ,
“আল্লাহ্পাক সমস্ত পৃথিবীকে আমার জন্য সংকুচিত করে দিয়েছেন। সুতরাং
আমি উহার সমস্ত পূর্ব-পশ্চিম এক নজরে দেখতে পাই।” (মুসলিম
শরীফ : কিতাবুল ফিতন / তিরমিজি শরীফ : ২য় খন্ড, ৪৫ পৃষ্ঠা)।
তিনি
আরো ফরমানঃ
অর্থাৎ,
“আল্লাহ্পাক এই পৃথিবীকে আমার চোখের সামনে এরূপভাবে রেখেছেন যে, আমি সমস্ত পৃথিবীকে এবং কেয়ামত পর্যন্ত উহার মধ্যে যা কিছু সৃষ্টি হবে তদসমুদয়কে এমনিভাবে দেখি যেন উহা আমার এই হাতের তালুর মধ্যে।” (মাওয়াহেবুল্
লাদুনিয়াহ, ৩য় খন্ড : পৃষ্ঠা - ৫৫৯)।
শরহে
বুখারীতে বর্ণিতঃ
অর্থাৎ,
“কেয়ামত কখন হবে তা আল্লাহ্ ভিন্ন কেহই জানে না। কিন্তু
তিনি রাসূলগণের মধ্যে যাকে চান তাঁকে এলমে গায়েব জানান। কেননা
আল্লাহ্ স্বীয় গায়েব (রাসূলগণ হতে) যাকে ইচ্ছা তাঁকে জানান এবং আউলিয়াগণ তাঁর (রাসূলের) অধীন এবং যা (এলমে গায়েব) তাঁর নিকট হতে পেয়ে থাকেন।” (ইরশাদুস্
সারী : শরহে বুখারী)
উল্লেখিত
আয়াতে কারিমা এবং হাদীসের আলোকে ইহাই প্রমাণিত হয় যে, হযরত নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গায়েবের অধিকারী এবং তাঁর উম্মতগণের মধ্যে আউলিয়াকেরামগণও তাঁর মাধ্যমে ‘এলমে গায়েব’ লাভ করে থাকেন।
হযরত
নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিঃসন্দেহে শাফায়াতকারী। এরশাদ
হচ্ছেঃ
অর্থাৎ,
“ঐ ব্যক্তি কে যে তাঁর (আল্লাহর) নিকট তাঁর নির্দেশ ভিন্ন (কারো জন্য) সুপারিশ করবে? তার অগ্রে যা কিছু এবং পশ্চাতে যা কিছু (ঐ ব্যক্তি সেইসব বিষয়ে) অবগত আছেন এবং তিনি (আল্লাহ্) যা চান কেবলমাত্র তাই তিনি (সুপারিশকারী) তার জন্য জ্ঞানের মধ্যে পেয়ে থাকেন।” (সূরা
- আল্-বাক্বারাহ : আয়াত - ২৫৫)
এইতো
হল শব্দগত অর্থ। এর
অন্তনির্হিত অর্থের দিকে যদি তাকাই তাহলে এটাইতো সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয় যে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ্পাকের অনুমতি সাপেক্ষে অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ হতে কেউ উম্মতের শাফায়াতকারী নিযুক্ত হবেন। আর
যিনি শাফায়াতকারী হবেন, তিনি যাদের শাফায়াত করবেন তাদের অতীতের কার্যকলাপ এবং ভবিষ্যত পরিণাম সম্পর্কে অবগত থাকবেন। এরই
জন্য তাঁকে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর প্রদত্ত এলমে গায়েবের অধিকারী হতে হবে। এই
হল শাফায়াতকারী হওয়ার জন্য আরোপিত বিশেষ শর্ত।
যেহেতু
আল্লাহ্পাক হযরত নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উক্ত গুণে গুণান্বিত করেছেন, তাই তিনি হবেন সর্বপ্রথম উম্মতের শাফায়াতকারী এবং তাঁর উসিলায় তাঁর উম্মতগণের মধ্যে হতে পর্যায়ক্রমে অনেক আউলিয়াকেরাম এবং সালেহীনগণও শাফায়াত করার অধিকার লাভ করবেন।
হযরত
নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সর্বপ্রথম উম্মতের শাফায়াতকারী হবেন সেই প্রসঙ্গে তিনি নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি
ফরমানঃ
অর্থাৎ,
হযরত নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমান - “কেয়ামতের দিন যখন মানুষ প্রচন্ড ভীড়ে পরস্পর পরস্পরের উপর পতিত হবে তখন তারা হযরত আদম (আঃ)’র নিকট উপস্থিত হবে এবং বলবে, আপনি আমাদের জন্য আপনার রব-এর নিকট সুপারিশ করুন। তিনি
বলবেন, আমি ইহার উপযুক্ত নই, তোমরা আল্লাহর খলীল ইব্রাহীম (আঃ)’র নিকট যাও। অতঃপর
তারা ইব্রাহীম (আঃ)’র নিকট যাবে। তিনি
বলবেন আমি এর উপযুক্ত নই, তোমরা বরং হযরত মুসা (আঃ)’র নিকট যাও, তিনি আল্লাহর কলিম। অতঃপর
তারা হযরত মুসা (আঃ)’র নিকট যাবে। তিনি
বলবেন আমি এর যোগ্য নই, তোমরা বরং হযরত ঈসা (আঃ)’র নিকট যাও। অতঃপর
তারা হযরত ঈসা (আঃ)’র নিকট যাবে। তিনি
বলবেন আমি এর যোগ্য নই, বরং তোমাদের উপর এ বিষয়ে হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই যথার্থ যোগ্যতা রাখেন। অতঃপর
তারা আমার নিকট আসবে। আমি
বলব, হ্যাঁ আমি এজন্যই রয়েছি। অতঃপর
আমি আমার প্রতিপালকের নিকট অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দান করবেন এবং তিনি আমাকে কতিপয় প্রশংসা বাণী শিক্ষা দিবেন। আমি
ঐ সকল বাণীদ্বারা তাঁর গুণকীর্তন করব এবং পরিশেষে তাঁর উদ্দেশ্যে সেজদায় অবনত হব। তখন
বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! আপনি মস্তক উত্তোলন করুন এবং আপনার যা খুশী বলুন, আপনি যা ইচ্ছা চান আপনাকে দেয়া হবে, আপনি যে সুপারিশ করবেন তা কবুল হবে। আমি
তখন বলব - হে আমার প্রতিপালক, আমার উম্মতকে রক্ষা করুন, আমার উম্মতকে রক্ষা করুন। তখন
এরশাদ হবে (হে আমার মাহবুব) যান, যার অন্তরে এক ধুলিকণা পরিমাণও ঈমান আছে তাকে আপনি (দোজখ হতে) বের করে নিন।” (সহীহ
বুখারী : কিতাবুস্ সালাত / বাব - কালামুর রাব্বি আয্যা ও ওয়াজাল্লা ইয়াওমাল কিয়ামতি মায়াল আম্বিয়া আলাইহিমু ছালাম)।
তিনি
ফরমানঃ
অর্থাৎ,
“যে ব্যক্তি কেবল আমার যেয়ারতের উদ্দেশ্যে আমার রওযা মোবারকে আসবে, এবং ঐ সফরে আমার যেয়ারতই কেবল তাকে উদ্বুদ্ধ করবে, কেয়ামতের দিন তার জন্য শাফায়াত করা আমার নৈতিক দায়িত্ব হয়ে যাবে ।” (সুনানে
ইবনে মাজাহ : বাব ফজলুল মাদীনাহ)