সাম্প্রতিক পোস্টসমূহ
loading..
- Back to Home »
- আকিদা , ইতিহাস , এস জি এম চিশতী , শরীয়ত »
- # আল - ইয়াওমুল - আশুরা (সংকলন) শেষ পর্ব
Posted by :
Unknown
Tuesday, November 4, 2014
১০ই মহররম বা ইয়াওমুল আশুরা-
পূর্বদিগন্তে ভোরের সূর্যের আবীর ছটায় রক্তিম আভা ধারণ করেছে । সূর্য ধীরে ধীরে উদিত হচ্ছে । তিন দিনের ক্ষুধা পিপাসায় কাতর, খোলা আকাশের নিচে তাঁবুর ভিতর উত্তপ্ত বালুকা রাশি, প্রখর রৌদ্র তাপে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত সদস্যদের হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ দিতে লাগলেন, জেহাদের ময়দানে ইবনে সা'দের নেতৃত্বাধীন ২০ হাজার এজিদ বাহিনীর মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিতে লাগলেন এবং অহেতুক রক্তপাত বন্ধের শেষ চেষ্টায় রত হয়ে ইবনে সা'দের সৈন্যদের নিকট তশরীফ নিলেন, এবং বলতে লাগলেন - "হে ইরাকবাসি, তোমরা নিশ্চয়ই জানো আমি তোমাদের রাসুলের দৌহিত্র, হযরত আলী আল মর্তুজা (কঃ)'র হৃদয়ের ধন, রাসুল তনয়া ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ)'র কলিজার টুকরা, ঈমাম হাসান (আঃ)'র ভাই । রক্তপাত হারাম, আমি তোমাদের এই গুনাহের কাজ হতে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছি । তোমরা তোমাদের শহরে যদি আমার এই আগমন না-ই পছন্দ কর তবে আমাকে ফিরে যেতে দাও । আমিতো তোমাদের কোন কিছুরই প্রত্যাশী নই, তবে তোমরা কেন আমার জানের প্রত্যাশী ? তোমরা আমার রক্তের বিনিময়ে কি করে বড়লোক হবে, ধনবান হবে ? কাল-হাশরের দিন আমার এই রক্তের তোমরা কি জবাব দিবে ? তোমাদের কাজের পরিণতির কথা তোমরা একবার ভাবো । নিজের পরিণাম চিন্তা করো, একবার ভাবো আমি কে, কার নূর-এ-নাযার এবং কাদের সন্তান ? আমার মা ঐ রাসুল তনয়া ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ), যিনি হাসরের দিন পুল-সিরাত পার হওয়াকালিন আল্লাহপাক বলবেন - 'হে আহলে মাহশর বা হাশরবাসী তোমাদের মাথা নত করো এবং চোখ বন্ধ করো, কেননা খাতুন এ জান্নাত ৭০ হাজার হুরসহ এখন পুল-সেরাত পার হবেন ।' আমি ঐ ব্যাক্তি যার প্রতি মহব্বতকে আমার নানাজান রাসুলে খোদা (দঃ) তাঁরই প্রতি মহব্বত বলে ব্যক্ত করেছেন । তোমরাই আমাকে পত্র মারফত দাওয়াত দিয়ে এখানে ডেকে এনেছো আর আজ তোমরাই আমার রক্ত পিপাসু হলে ?" কুফাবাসি তাদের প্রেরিত দাওয়াত পত্রের কথা সম্পুর্ন অস্বীকার করলে এবং হযরত মিথ্যা বলেছেন বললে তিনি বুঝতে পারলেন তাঁর এই প্রচেষ্টা বৃথাই হলো, কোন ফল হলো না । তিনি তথাপি শেষবারের মত কুফাবাসির প্রতি বললেন - "তোমাদের কি রাসুল এ খোদা (দঃ)'র বানীর কথা স্মরণ নেই যে, আমি বেহেশতের সকল যুবকদের সর্দার; আমি কি তোমাদের নবীর দৌহিত্র নই ? তোমরা যাবের বিন আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞেস করো, জিজ্ঞেস করো আবু সাইয়ীদ খুদরীকে, আনেস-বিন-মালেককে ।" এতদ শ্রবণে কায়েস-আশআত বলে উঠলো - "তুমি কেন বনি আমেরের কথা মেনে নিচ্ছ না অর্থাৎ এজিদের আনুগত্য স্বীকার করছো না ?" তিনি (হযরত) বললেন - "খোদার কসম, আমি পথভ্রষ্টের মত তার হাতে হাত দিব না, গোলামের মতো কখনও তার দাসত্ব স্বীকার করবো না ।" অবশেষে ইবনে সা'দের নেতৃত্বে এজিদের বাহিনী ঈমামের সাথে জেহাদে অবতীর্ন হলো । সর্ব প্রথম হযরত হুর (রাঃ) বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে বহু শত্রু সৈন্য কতল করে শাহাদাত বরণ করলেন । এরপর জেহাদে অবতির্ন হলেন আঠারো বছরের যুবক ওহাব - বিন - আব্দুল্লাহ, যিনি তাঁর মাতার আদেশে ময়দানে যাত্রার পূর্বে স্ত্রী হতে অনুমতি নিতে গেলে তরুণী স্ত্রী বললেন - 'আলহামদুলিল্লাহ আমার এতে কোনো আপত্তি নেই; তবে একটি শর্ত বা অনুরোধ যখন আপনি শাহাদাত বরণ করে বেহেশতে প্রবেশ করতে যাবেন, তখন কিন্তু আমাকে ছাড়া প্রবেশ করবেননা ।' হোলও তাই, দেখা গেল তাঁর শাহাদাত বরণের পর তাঁর দ্বিখণ্ডিত মস্তক পাপিষ্ঠরা তাঁবুতে ছুড়ে মারলে তাঁর স্ত্রী ঐ রক্তমাখা দ্বিখণ্ডিত মস্তক কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে এক সময় তারই উপর ঝুঁকে পড়ে চিরনিদ্রায় নিদ্রিত হলেন এবং স্বামীর সাথে বেহেশতে প্রবেশ করলেন । এমনিভাবে একের পর এক বীর ঈমাম সদস্যবৃন্দ বীরত্বের সাথে জেহাদ করে ইবনে সা'দ ও সীমারের অসংখ্য সৈন্য কতল করে শাহাদাত বরণ করতে লাগলেন । ঈমাম পরিবার ভিন্ন যখন আর একজনও অবশিষ্ট রইলেন না তখন ঈমাম তনয় ১৭ বৎসরের যুবক হযরত আলী আকবর (রাঃ) যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হয়ে পিতার অনুমতি নিয়ে সর্ব প্রথম ময়দানে উপস্থিত হয়ে বললেন - "আমি হোসাইন বিন আলীর পুত্র, আল্লাহর কসম, আমি রাসুল এ খোদার ঘনিষ্টতম সম্পর্কের অধিকারী ।" ইবনে সা'দ তাঁকে আসতে দেখে বিচলিত হয়ে সিমারকে জিজ্ঞেস করলো - "ইনি কে ? এঁর চেহারাতো চন্দ্র হতে অধিক উজ্জ্বল ।" সীমার বললো - "ইনি হোসাইন বিন আলীর পুত্র ।" শত্রু পক্ষের কেহই যখন তাঁর সামনে আসতে সাহস পেলো না, তিনি তখন তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং একের পর এক শত্রুসৈন্যকে কতল করতে করতে সম্মুখে অগ্রসর হতে লাগলেন । কমপক্ষে ৫০০ শত্রুসেনা খতম করার পর পিপাসায় কাতর হয়ে তাঁবুতে ফিরে এসে হযরত হোসাইন (আঃ) কে বললেন - "আব্বাজান, পিপাসায় আমি অন্ধকার দেখছি ।" হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) তাঁকে সান্তনা দিয়ে বললেন - "বৎস, তোমার প্রপিতামহ রাসুলে খোদা (সাঃ) হাউজে কাউসারের শরবত নিয়ে তোমার অপেক্ষায় আছেন ।" এতদশ্রবনে তিনি আবার ঘোড়া ছুটিয়ে ময়দানে ফিরে গেলেন । দুশমনদের মাথার উপর তাঁর তলোয়ার বিদ্যুতের ন্যায় চমকাতে লাগলো । শত্রুর তীর ও নেজার আঘাতে তাঁর দেহ মোবারক ক্ষত-বিক্ষত হতে লাগলো, এমনি এক সময় তিনি একটু থামলে তাঁর পিছন হতে মর্দন-বিন-মনকাছের নেজার আঘাতে তিনি ধরাশায়ী হলেন । হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) ঘোড়া ছুটিয়ে এসে দেখলেন তাঁর প্রানের ধনকে দুশমনেরা ইতিমধ্যে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে । তিনি খণ্ডিত দেহ মোবারককে একত্রিত করে তাঁবুতে নিয়ে গেলেন । লাশ মোবারক দেখে সবাই ক্রন্দনে ভেঙ্গে পড়লেন । এমনিভাবে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মোসলেম, হযরত কাসেম বিন হাসান, হযরত আব্বাস, জয়নবের দুই পুত্র আউন এবং মোহাম্মদ প্রমুখ আওলাদ ও ফরজন্দে ঈমাম হোসাইন (আঃ) বীরত্বের সাথে জেহাদ করে একের পর এক শাহাদাত বরণ করতে লাগলেন । এক সময় তাঁবুর মধ্য হতে ক্রন্দনের আওয়াজ ভেসে এলে তিনি তাঁবুর ভিতরে প্রবেশ করে দেখেন দুগ্ধপোষ্য শিশু আসগর যার বয়স মাত্র ৬ মাস, নিদারুণ পিপাসায় ছটফট করছেন । হযরত জয়নব কেঁদে উঠে বললেন - "ভাইয়া, সকল দুঃখ-কষ্টই সহ্য করা যায়, কিন্তু এ দৃশ্য সহ্য করা যায় না।" হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ) বললেন - "একে আমার কাছে দাও, হয়তো এই বাচ্চার প্রতি কারও দয়া হতে পারে।"
শিশু আসগর (রাঃ) কে কোলে নিয়ে তাঁবুর বাইরে এসে বললেন - "হে কুফাবাসি, এ দুগ্ধপোষ্য শিশু তোমাদের কোনই ক্ষতি করেনি, অন্ততঃ এই শিশুটিকে এক চুমুক পানি দাও।" কিন্তু পানির পরিবর্তে এক পাষণ্ডের তীর এসে শিশু আসগর (রাঃ)'র গন্ডাদেশ চিড়ে হযরত হোসাইন (আঃ)'র বাহুবিদ্ধ করলো। তিনি বেদনাকাতর নয়নে আকাশপানে একবার তাকালেন এবং তীর বের করে ছুড়ে ফেলে দিলেন। শিশু আসগর (রাঃ)'র গন্ডাদেশ হতে রক্তের ধারা প্রবাহিত হতে লাগলো। তিনি এক কোশ রক্ত নিয়ে আকাশের দিকে ছুড়ে মাড়লেন এবং বললেন - "হে আল্লাহ তুমি যদি খুশি থাকো তাহলে এক আলী আসগর কেনো, এমনি হাজারো আলী আসগর তোমার রাস্তায় একে একে কোরবান করতে থাকবো।" এমনিভাবে একের পর এক ঈমাম পরিবার শাহাদাত বরণ করতে করতে পুরুষবর্গের মধ্যে একমাত্র শাহজাদা হযরত জয়নাল আবেদিন (রাঃ) এবং হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ)-ই অবশিষ্ট রইলেন। অসুস্থতার জন্য হযরত জয়নাল আবেদিন (রাঃ) কে জেহাদে শরীক হতে বারন করে হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) নিজেই ময়দানে যাত্রার জন্য তৈরি হতে লাগলেন। ময়দানে সে কি করুন দৃশ্য! শহীদানদের রক্তে রঙ্গিন কারবালার জমিন, ভাই ভাতিজা সন্তান এবং অন্যান্য শহীদগণ খণ্ডিত-দ্বিখণ্ডিত দেহ মোবারক নিয়ে রক্তের চাঁদরে মুখ ঢেকে ময়দানের এখানে সেখানে পড়ে আছেন, আশার প্রদিপ নিভে গেছে, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অস্ত্র হাতে নিয়ে ঘোড়ায় সাওয়ার হয়ে শত্রু সেনাদের সামনে হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) বলতে লাগলেন - "হে জালেমগণ খোদাকে ভয় করো, যদি তোমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করে থাকো আমার নানাজান সাইয়েদুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (দঃ)'র প্রতি ঈমান এনে থাক; কেয়ামতের দিনের বিচারকে বিশ্বাস করে থাক তাহলে আমার নানাজান সাইয়েদুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) যিনি সকল গুনাহগারের শাফায়েতকারি; সকল মুসলমান যার শাফায়েতের প্রত্যাশি; তাঁর কাছে অন্যায় ভাবে আমাদেরকে হত্যার, এই রক্তপাতের কি জবাব দিবে ? তোমরাতো আমার পরিবার ও প্রিয়জনদের সকলকে শহিদ করেছো। এখনতো শুধু বাকি আছি আমি, যদি সিংহাসন বা রাজত্বই আমার প্রতি তোমাদের এই আক্রশের মূল কারন হয়ে থাকে, তাহলে আমাকে আরব ছেড়ে দুনিয়ার অন্যত্র চলে যেতে দাও। অন্যথা আমি আল্লাহর মর্জির উপরে সবর এখতিয়ার করে তাঁর হুকুম পালনে ব্রত হবো।" হযরতের এই বাণী শুনে অনেক কুফাবাসিরই চোখে অশ্রু দেখা দিল। ইবনে সা'দ এতদ দর্শনে ভিত হয়ে বলতে লাগলো - "আপনি কাহিনী সংক্ষিপ্ত করুন, ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের কাছে এজিদের বশ্যতা স্বীকার করুন অন্যথা যুদ্ধে অবতীর্ন হওয়া ছাড়া আপনার আর কোন গতি নেই।" হযরত বললেন - "অন্যায়ের পূজারীর হাতে ন্যায়ের পূজারী কি করে আত্মসমর্পন করতে পারে ?" অবশেষে ইবনে সা'দ ও সিমারের নেতৃত্বাধীনে এজিদবাহিনী নিঃসঙ্গ ও পরিশ্রান্ত শাহাজাদার প্রতি হামলা চালাতে তৈরি হলো। এজিদ বাহিনীর বাছাই করা শ্রেষ্ঠ সৈন্যগণ একে একে তাঁর সহিত সম্মুখ সমরে অগ্রসর হলে তিনি তলোয়ারের একই আঘাতে তাদেরকে ধরাশায়ী করে বীরবিক্রমে ফোরাতকূলে উপস্থিত হলে সা'দ ও সীমার তাদের পরিণামের কথা চিন্তা করে প্রমোদ গুনতে লাগলো। সীমার চিৎকার করে বলতে লাগলো - "হে সৈন্যদল, সাবধান! হোসাইন বিন আলী এক কাতরা পানিও যেন পান করতে না পারে, তাহলে আমাদের একজনও জীবন নিয়ে কারবালা ত্যাগ করতে পারবে না।" হযরত হোসাইন (আঃ) ফোরাতে নেমে যেই না আঁজল ভরে পানি উঠালেন অমনি হযরতের দন্ত মোবারক লক্ষ করে হাসিন-বিন-নমির নামক এক নরাধম-পাষন্ড তীর ছুঁড়ল, তীরের আঘাতে তাঁর দন্ত মোবারক হতে রক্তের ধারা প্রবাহিত হতে লাগলো; আঁজলের পানি রক্তে রঙ্গিন হলো। তিনি ঐ রক্তমাখা পানি আসমানের দিকে ছুঁড়ে মারলেন। ইবনে সা'দ ও সীমার যখন বুঝতে পারলো যে, এমনিধারায় যুদ্ধ চললে তাদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী তখন চারিদিক হতে একযোগে আক্রমন চালাতে এবং হযরতের উপর তীরের বর্ষন করতে নির্দেশ দেয়া হলো। চতুর্দিক হতে নিক্ষিপ্ত হাজার হাজার তীরের আঘাতে হযরতের ওযুদ মোবারক ক্ষত-বিক্ষত হতে লাগলো, নূরময় দেহ রক্তে রঙ্গিন হতে লাগলো। তথাপি তিনি বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে যেতে লাগলেন। এমনি সময়ে সেনান-বিন-আনেছ, খুলি-বিন-এজিদকে হযরতের গর্দান মোবারক দ্বিখণ্ডিত করার আদেশ দিলে সে সম্মুখে অগ্রসর হলো বটে, কিন্তু তাঁর গর্দান মোবারক লক্ষ্য করে তলোয়ার তুলতে সাহস করলো না। তখন সেনান-বিন-আনেছ স্বয়ং ঘোড়া ছুটিয়ে হযরতের সামনে এসে ঘোড়া থেকে নামলো এবং তলোয়ার দ্বারা হযরতের শির মোবারক ওযুদ মোবারক হতে আলাদা করে ফেললো। (ইন্না-লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন) অর্থাৎ তিনি শাহাদাত বরণ করলেন।
সমস্ত আকাশ মুহূর্তের মধ্যে রক্তবর্ন ধারণ করলো, চতুর্দিক গভীর তমসাচ্ছন্ন হলো, কিছুক্ষন পর তমসা কেটে গেলো, আকাশ হতে রক্তের বারিধারা বর্ষিত হতে লাগলো। এমনি করে কারবালা প্রান্তরের মর্মান্তিক ইতিহাস সংঘটিত হলো।
সত্য ও ন্যায়ের ঝান্ডা উড্ডয়নের জন্য, লক্ষ লক্ষ ভক্তপ্রান উম্মতে মোহাম্মদীর নাজাতের জন্য, ইসলামের বুনিয়াদকে সুদৃঢ় ও চিরস্থায়ি করার জন্য ঈমাম হোসাইন (আঃ) এবং তাঁর পরিবারবর্গ একে একে কারবালা-প্রান্তে শাহাদাত বরণ করলেন, কিন্তু এজিদের হাতে হাত রেখে বশ্যতা স্বীকার করলেন না।
পূর্বদিগন্তে ভোরের সূর্যের আবীর ছটায় রক্তিম আভা ধারণ করেছে । সূর্য ধীরে ধীরে উদিত হচ্ছে । তিন দিনের ক্ষুধা পিপাসায় কাতর, খোলা আকাশের নিচে তাঁবুর ভিতর উত্তপ্ত বালুকা রাশি, প্রখর রৌদ্র তাপে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত সদস্যদের হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ দিতে লাগলেন, জেহাদের ময়দানে ইবনে সা'দের নেতৃত্বাধীন ২০ হাজার এজিদ বাহিনীর মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিতে লাগলেন এবং অহেতুক রক্তপাত বন্ধের শেষ চেষ্টায় রত হয়ে ইবনে সা'দের সৈন্যদের নিকট তশরীফ নিলেন, এবং বলতে লাগলেন - "হে ইরাকবাসি, তোমরা নিশ্চয়ই জানো আমি তোমাদের রাসুলের দৌহিত্র, হযরত আলী আল মর্তুজা (কঃ)'র হৃদয়ের ধন, রাসুল তনয়া ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ)'র কলিজার টুকরা, ঈমাম হাসান (আঃ)'র ভাই । রক্তপাত হারাম, আমি তোমাদের এই গুনাহের কাজ হতে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছি । তোমরা তোমাদের শহরে যদি আমার এই আগমন না-ই পছন্দ কর তবে আমাকে ফিরে যেতে দাও । আমিতো তোমাদের কোন কিছুরই প্রত্যাশী নই, তবে তোমরা কেন আমার জানের প্রত্যাশী ? তোমরা আমার রক্তের বিনিময়ে কি করে বড়লোক হবে, ধনবান হবে ? কাল-হাশরের দিন আমার এই রক্তের তোমরা কি জবাব দিবে ? তোমাদের কাজের পরিণতির কথা তোমরা একবার ভাবো । নিজের পরিণাম চিন্তা করো, একবার ভাবো আমি কে, কার নূর-এ-নাযার এবং কাদের সন্তান ? আমার মা ঐ রাসুল তনয়া ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ), যিনি হাসরের দিন পুল-সিরাত পার হওয়াকালিন আল্লাহপাক বলবেন - 'হে আহলে মাহশর বা হাশরবাসী তোমাদের মাথা নত করো এবং চোখ বন্ধ করো, কেননা খাতুন এ জান্নাত ৭০ হাজার হুরসহ এখন পুল-সেরাত পার হবেন ।' আমি ঐ ব্যাক্তি যার প্রতি মহব্বতকে আমার নানাজান রাসুলে খোদা (দঃ) তাঁরই প্রতি মহব্বত বলে ব্যক্ত করেছেন । তোমরাই আমাকে পত্র মারফত দাওয়াত দিয়ে এখানে ডেকে এনেছো আর আজ তোমরাই আমার রক্ত পিপাসু হলে ?" কুফাবাসি তাদের প্রেরিত দাওয়াত পত্রের কথা সম্পুর্ন অস্বীকার করলে এবং হযরত মিথ্যা বলেছেন বললে তিনি বুঝতে পারলেন তাঁর এই প্রচেষ্টা বৃথাই হলো, কোন ফল হলো না । তিনি তথাপি শেষবারের মত কুফাবাসির প্রতি বললেন - "তোমাদের কি রাসুল এ খোদা (দঃ)'র বানীর কথা স্মরণ নেই যে, আমি বেহেশতের সকল যুবকদের সর্দার; আমি কি তোমাদের নবীর দৌহিত্র নই ? তোমরা যাবের বিন আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞেস করো, জিজ্ঞেস করো আবু সাইয়ীদ খুদরীকে, আনেস-বিন-মালেককে ।" এতদ শ্রবণে কায়েস-আশআত বলে উঠলো - "তুমি কেন বনি আমেরের কথা মেনে নিচ্ছ না অর্থাৎ এজিদের আনুগত্য স্বীকার করছো না ?" তিনি (হযরত) বললেন - "খোদার কসম, আমি পথভ্রষ্টের মত তার হাতে হাত দিব না, গোলামের মতো কখনও তার দাসত্ব স্বীকার করবো না ।" অবশেষে ইবনে সা'দের নেতৃত্বে এজিদের বাহিনী ঈমামের সাথে জেহাদে অবতীর্ন হলো । সর্ব প্রথম হযরত হুর (রাঃ) বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে বহু শত্রু সৈন্য কতল করে শাহাদাত বরণ করলেন । এরপর জেহাদে অবতির্ন হলেন আঠারো বছরের যুবক ওহাব - বিন - আব্দুল্লাহ, যিনি তাঁর মাতার আদেশে ময়দানে যাত্রার পূর্বে স্ত্রী হতে অনুমতি নিতে গেলে তরুণী স্ত্রী বললেন - 'আলহামদুলিল্লাহ আমার এতে কোনো আপত্তি নেই; তবে একটি শর্ত বা অনুরোধ যখন আপনি শাহাদাত বরণ করে বেহেশতে প্রবেশ করতে যাবেন, তখন কিন্তু আমাকে ছাড়া প্রবেশ করবেননা ।' হোলও তাই, দেখা গেল তাঁর শাহাদাত বরণের পর তাঁর দ্বিখণ্ডিত মস্তক পাপিষ্ঠরা তাঁবুতে ছুড়ে মারলে তাঁর স্ত্রী ঐ রক্তমাখা দ্বিখণ্ডিত মস্তক কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে এক সময় তারই উপর ঝুঁকে পড়ে চিরনিদ্রায় নিদ্রিত হলেন এবং স্বামীর সাথে বেহেশতে প্রবেশ করলেন । এমনিভাবে একের পর এক বীর ঈমাম সদস্যবৃন্দ বীরত্বের সাথে জেহাদ করে ইবনে সা'দ ও সীমারের অসংখ্য সৈন্য কতল করে শাহাদাত বরণ করতে লাগলেন । ঈমাম পরিবার ভিন্ন যখন আর একজনও অবশিষ্ট রইলেন না তখন ঈমাম তনয় ১৭ বৎসরের যুবক হযরত আলী আকবর (রাঃ) যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হয়ে পিতার অনুমতি নিয়ে সর্ব প্রথম ময়দানে উপস্থিত হয়ে বললেন - "আমি হোসাইন বিন আলীর পুত্র, আল্লাহর কসম, আমি রাসুল এ খোদার ঘনিষ্টতম সম্পর্কের অধিকারী ।" ইবনে সা'দ তাঁকে আসতে দেখে বিচলিত হয়ে সিমারকে জিজ্ঞেস করলো - "ইনি কে ? এঁর চেহারাতো চন্দ্র হতে অধিক উজ্জ্বল ।" সীমার বললো - "ইনি হোসাইন বিন আলীর পুত্র ।" শত্রু পক্ষের কেহই যখন তাঁর সামনে আসতে সাহস পেলো না, তিনি তখন তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং একের পর এক শত্রুসৈন্যকে কতল করতে করতে সম্মুখে অগ্রসর হতে লাগলেন । কমপক্ষে ৫০০ শত্রুসেনা খতম করার পর পিপাসায় কাতর হয়ে তাঁবুতে ফিরে এসে হযরত হোসাইন (আঃ) কে বললেন - "আব্বাজান, পিপাসায় আমি অন্ধকার দেখছি ।" হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) তাঁকে সান্তনা দিয়ে বললেন - "বৎস, তোমার প্রপিতামহ রাসুলে খোদা (সাঃ) হাউজে কাউসারের শরবত নিয়ে তোমার অপেক্ষায় আছেন ।" এতদশ্রবনে তিনি আবার ঘোড়া ছুটিয়ে ময়দানে ফিরে গেলেন । দুশমনদের মাথার উপর তাঁর তলোয়ার বিদ্যুতের ন্যায় চমকাতে লাগলো । শত্রুর তীর ও নেজার আঘাতে তাঁর দেহ মোবারক ক্ষত-বিক্ষত হতে লাগলো, এমনি এক সময় তিনি একটু থামলে তাঁর পিছন হতে মর্দন-বিন-মনকাছের নেজার আঘাতে তিনি ধরাশায়ী হলেন । হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) ঘোড়া ছুটিয়ে এসে দেখলেন তাঁর প্রানের ধনকে দুশমনেরা ইতিমধ্যে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে । তিনি খণ্ডিত দেহ মোবারককে একত্রিত করে তাঁবুতে নিয়ে গেলেন । লাশ মোবারক দেখে সবাই ক্রন্দনে ভেঙ্গে পড়লেন । এমনিভাবে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মোসলেম, হযরত কাসেম বিন হাসান, হযরত আব্বাস, জয়নবের দুই পুত্র আউন এবং মোহাম্মদ প্রমুখ আওলাদ ও ফরজন্দে ঈমাম হোসাইন (আঃ) বীরত্বের সাথে জেহাদ করে একের পর এক শাহাদাত বরণ করতে লাগলেন । এক সময় তাঁবুর মধ্য হতে ক্রন্দনের আওয়াজ ভেসে এলে তিনি তাঁবুর ভিতরে প্রবেশ করে দেখেন দুগ্ধপোষ্য শিশু আসগর যার বয়স মাত্র ৬ মাস, নিদারুণ পিপাসায় ছটফট করছেন । হযরত জয়নব কেঁদে উঠে বললেন - "ভাইয়া, সকল দুঃখ-কষ্টই সহ্য করা যায়, কিন্তু এ দৃশ্য সহ্য করা যায় না।" হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ) বললেন - "একে আমার কাছে দাও, হয়তো এই বাচ্চার প্রতি কারও দয়া হতে পারে।"
শিশু আসগর (রাঃ) কে কোলে নিয়ে তাঁবুর বাইরে এসে বললেন - "হে কুফাবাসি, এ দুগ্ধপোষ্য শিশু তোমাদের কোনই ক্ষতি করেনি, অন্ততঃ এই শিশুটিকে এক চুমুক পানি দাও।" কিন্তু পানির পরিবর্তে এক পাষণ্ডের তীর এসে শিশু আসগর (রাঃ)'র গন্ডাদেশ চিড়ে হযরত হোসাইন (আঃ)'র বাহুবিদ্ধ করলো। তিনি বেদনাকাতর নয়নে আকাশপানে একবার তাকালেন এবং তীর বের করে ছুড়ে ফেলে দিলেন। শিশু আসগর (রাঃ)'র গন্ডাদেশ হতে রক্তের ধারা প্রবাহিত হতে লাগলো। তিনি এক কোশ রক্ত নিয়ে আকাশের দিকে ছুড়ে মাড়লেন এবং বললেন - "হে আল্লাহ তুমি যদি খুশি থাকো তাহলে এক আলী আসগর কেনো, এমনি হাজারো আলী আসগর তোমার রাস্তায় একে একে কোরবান করতে থাকবো।" এমনিভাবে একের পর এক ঈমাম পরিবার শাহাদাত বরণ করতে করতে পুরুষবর্গের মধ্যে একমাত্র শাহজাদা হযরত জয়নাল আবেদিন (রাঃ) এবং হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ)-ই অবশিষ্ট রইলেন। অসুস্থতার জন্য হযরত জয়নাল আবেদিন (রাঃ) কে জেহাদে শরীক হতে বারন করে হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) নিজেই ময়দানে যাত্রার জন্য তৈরি হতে লাগলেন। ময়দানে সে কি করুন দৃশ্য! শহীদানদের রক্তে রঙ্গিন কারবালার জমিন, ভাই ভাতিজা সন্তান এবং অন্যান্য শহীদগণ খণ্ডিত-দ্বিখণ্ডিত দেহ মোবারক নিয়ে রক্তের চাঁদরে মুখ ঢেকে ময়দানের এখানে সেখানে পড়ে আছেন, আশার প্রদিপ নিভে গেছে, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অস্ত্র হাতে নিয়ে ঘোড়ায় সাওয়ার হয়ে শত্রু সেনাদের সামনে হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) বলতে লাগলেন - "হে জালেমগণ খোদাকে ভয় করো, যদি তোমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করে থাকো আমার নানাজান সাইয়েদুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (দঃ)'র প্রতি ঈমান এনে থাক; কেয়ামতের দিনের বিচারকে বিশ্বাস করে থাক তাহলে আমার নানাজান সাইয়েদুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) যিনি সকল গুনাহগারের শাফায়েতকারি; সকল মুসলমান যার শাফায়েতের প্রত্যাশি; তাঁর কাছে অন্যায় ভাবে আমাদেরকে হত্যার, এই রক্তপাতের কি জবাব দিবে ? তোমরাতো আমার পরিবার ও প্রিয়জনদের সকলকে শহিদ করেছো। এখনতো শুধু বাকি আছি আমি, যদি সিংহাসন বা রাজত্বই আমার প্রতি তোমাদের এই আক্রশের মূল কারন হয়ে থাকে, তাহলে আমাকে আরব ছেড়ে দুনিয়ার অন্যত্র চলে যেতে দাও। অন্যথা আমি আল্লাহর মর্জির উপরে সবর এখতিয়ার করে তাঁর হুকুম পালনে ব্রত হবো।" হযরতের এই বাণী শুনে অনেক কুফাবাসিরই চোখে অশ্রু দেখা দিল। ইবনে সা'দ এতদ দর্শনে ভিত হয়ে বলতে লাগলো - "আপনি কাহিনী সংক্ষিপ্ত করুন, ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের কাছে এজিদের বশ্যতা স্বীকার করুন অন্যথা যুদ্ধে অবতীর্ন হওয়া ছাড়া আপনার আর কোন গতি নেই।" হযরত বললেন - "অন্যায়ের পূজারীর হাতে ন্যায়ের পূজারী কি করে আত্মসমর্পন করতে পারে ?" অবশেষে ইবনে সা'দ ও সিমারের নেতৃত্বাধীনে এজিদবাহিনী নিঃসঙ্গ ও পরিশ্রান্ত শাহাজাদার প্রতি হামলা চালাতে তৈরি হলো। এজিদ বাহিনীর বাছাই করা শ্রেষ্ঠ সৈন্যগণ একে একে তাঁর সহিত সম্মুখ সমরে অগ্রসর হলে তিনি তলোয়ারের একই আঘাতে তাদেরকে ধরাশায়ী করে বীরবিক্রমে ফোরাতকূলে উপস্থিত হলে সা'দ ও সীমার তাদের পরিণামের কথা চিন্তা করে প্রমোদ গুনতে লাগলো। সীমার চিৎকার করে বলতে লাগলো - "হে সৈন্যদল, সাবধান! হোসাইন বিন আলী এক কাতরা পানিও যেন পান করতে না পারে, তাহলে আমাদের একজনও জীবন নিয়ে কারবালা ত্যাগ করতে পারবে না।" হযরত হোসাইন (আঃ) ফোরাতে নেমে যেই না আঁজল ভরে পানি উঠালেন অমনি হযরতের দন্ত মোবারক লক্ষ করে হাসিন-বিন-নমির নামক এক নরাধম-পাষন্ড তীর ছুঁড়ল, তীরের আঘাতে তাঁর দন্ত মোবারক হতে রক্তের ধারা প্রবাহিত হতে লাগলো; আঁজলের পানি রক্তে রঙ্গিন হলো। তিনি ঐ রক্তমাখা পানি আসমানের দিকে ছুঁড়ে মারলেন। ইবনে সা'দ ও সীমার যখন বুঝতে পারলো যে, এমনিধারায় যুদ্ধ চললে তাদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী তখন চারিদিক হতে একযোগে আক্রমন চালাতে এবং হযরতের উপর তীরের বর্ষন করতে নির্দেশ দেয়া হলো। চতুর্দিক হতে নিক্ষিপ্ত হাজার হাজার তীরের আঘাতে হযরতের ওযুদ মোবারক ক্ষত-বিক্ষত হতে লাগলো, নূরময় দেহ রক্তে রঙ্গিন হতে লাগলো। তথাপি তিনি বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে যেতে লাগলেন। এমনি সময়ে সেনান-বিন-আনেছ, খুলি-বিন-এজিদকে হযরতের গর্দান মোবারক দ্বিখণ্ডিত করার আদেশ দিলে সে সম্মুখে অগ্রসর হলো বটে, কিন্তু তাঁর গর্দান মোবারক লক্ষ্য করে তলোয়ার তুলতে সাহস করলো না। তখন সেনান-বিন-আনেছ স্বয়ং ঘোড়া ছুটিয়ে হযরতের সামনে এসে ঘোড়া থেকে নামলো এবং তলোয়ার দ্বারা হযরতের শির মোবারক ওযুদ মোবারক হতে আলাদা করে ফেললো। (ইন্না-লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন) অর্থাৎ তিনি শাহাদাত বরণ করলেন।
সমস্ত আকাশ মুহূর্তের মধ্যে রক্তবর্ন ধারণ করলো, চতুর্দিক গভীর তমসাচ্ছন্ন হলো, কিছুক্ষন পর তমসা কেটে গেলো, আকাশ হতে রক্তের বারিধারা বর্ষিত হতে লাগলো। এমনি করে কারবালা প্রান্তরের মর্মান্তিক ইতিহাস সংঘটিত হলো।
সত্য ও ন্যায়ের ঝান্ডা উড্ডয়নের জন্য, লক্ষ লক্ষ ভক্তপ্রান উম্মতে মোহাম্মদীর নাজাতের জন্য, ইসলামের বুনিয়াদকে সুদৃঢ় ও চিরস্থায়ি করার জন্য ঈমাম হোসাইন (আঃ) এবং তাঁর পরিবারবর্গ একে একে কারবালা-প্রান্তে শাহাদাত বরণ করলেন, কিন্তু এজিদের হাতে হাত রেখে বশ্যতা স্বীকার করলেন না।
নূরে নজরে হোসাইন হযরত খাজা গরীব নওয়ায রাঃ আঃ র পবিত্র কন্ঠে কি অন্তহীন তাৎপর্য নিয়ে ধ্বনিত হয়েছেঃ
"হোসাইনই শাহানশাহ হোসাইনই বাদশাহ
হোসাইনই দ্বীন হোসাইনই দ্বীনের ত্রাতা
দিয়েছেন শির দেননিতো ইয়াযিদের হাতে হাত
মহাসত্য তো এই যে হোসাইনই 'লা ইলাহার' বুনিয়াদ।"
লেখকঃ এস জি এম চিশতী
(সমাপ্ত)