সাম্প্রতিক পোস্টসমূহ
loading..
- Back to Home »
- আকিদা , ইতিহাস , এস জি এম চিশতী , শরীয়ত »
- # আল - ইয়াওমুল - আশুরা (সংকলন) পর্ব - ৩
Posted by :
Unknown
Saturday, November 1, 2014
আহলে বায়েত গণের শা'ন যে কত মহান, তাঁদের মর্তবা যে কত উর্ধ্বে, হুযুর পাক (সাঃ)'র পবিত্র বানীও তার যথার্থ প্রমাণ বহন করে।
হুজুর পাক (সাঃ) ফরমানঃ
"মোহাম্মদের আল বা পরিবারবর্গ মারেফত দোযখ হতে পরিত্রাণ লাভের অবলম্বন। মোহাম্মদের আল এর প্রতি ভালোবাসা পুল-সিরাত পার হওয়ার সনদ এবং মোহাম্মদের আল এর বেলায়েত আজাব হতে আমান স্বরূপ।"
হুজুর (সাঃ) ফরমানঃ
"তোমরা আমাকে ভালবাসো আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করার জন্য, আর আমার আহলে বায়েতকে ভালবাসো আমার ভালোবাসা লাভ করার জন্য।"
হুজুর (সাঃ) ফরমানঃ
"হে মানুষ, আমি তোমাদের জন্য ঐ (মুল্যবান) বস্তু রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তা' দৃঢ় ভাবে ধারণ কর তবে কখনও পথভ্রষ্ট বা গোমরাহ হবে না। তা' হলো আল্লাহর কিতাব ও আমার ইতরাত (আপনজন), আমার আহলে বায়েত।"
হুজুর (সাঃ) আরো ফরমানঃ
"আমার আহলে বায়েত হলো নূহ এর নৌকা স্বরূপ, যারা এতে আরোহণ করেছে (অর্থাৎ, এতে নিজেকে সমর্পন করেছে) তারা পরিত্রাণ লাভ করেছে। আর যারা এর বিরোধিতা করেছে (অর্থাৎ, আনুগত্য স্বীকার করে নাই) তারা নিমজ্জিত (অর্থাৎ, ধ্বংস প্রাপ্ত) হয়েছে।"
কিন্তু কি মর্মন্তুদ যে, অর্থের লোভে, প্রাচুর্য্যের লোভে, ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দিয়ে পরকালকে ভুলে গিয়ে উম্মতে মোহাম্মদীর মুখোশ পরে আবু সুফিয়ানের দৌহিত্র মাবিয়ার পুত্র এজিদের নির্দেশে তার অনুসারীগণ কারবালা প্রান্তরে এই আহলে বায়েতগণের অন্যতম, নূর - এ - নাযরে রাসুলে খোদা (সাঃ), জীগার গোশায়ে ফাতেমা (রাঃ) হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ), তাঁর পরিবারবর্গ ও সহচরবৃন্দের উপর নির্মম অত্যাচার চালাতে, নিষ্ঠুরভাবে হযরত আলী আকবর (রাঃ), দুগ্ধপোষ্য শিশু হযরত আলী আসগর (রাঃ) প্রমুখ আওলাদে হোসাইনকে এমনকি হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কেও হত্যা করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করেনি। হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) আহলে-বায়েত সম্পর্কে আল্লাহ ও রাসুলের বাণী স্মরণ করিয়া দেয়া সত্ত্বেও এজিদের অনুসারি এই নর পিশাচদের হৃদয়ে বিন্দুমাত্র দাগ কাটেনি। ক্ষমতা লোলুপ মদ্যপায়ী চরিত্রহীন এজিদ ইবনে মাবিয়ার হীন চক্রান্ত এবং বুজদেল - বেঈমান কুফাবাসীদের বেঈমানির ফলশ্রুতি স্বরূপ কারবালা প্রান্তরে ঈমাম পরিবারকে কেন্দ্র করে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল তারই প্রেক্ষাপটে রচিত হৃদয় বিদারক করুন ইতিহাসের কিয়দাংশ সংক্ষেপে এখানে তুলে ধরা হলো।
কুফাবাসীদের আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে তথায় যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) ২৭শে রজব মক্কা - মোয়াজ্জেমার উদ্দেশ্যে মদিনা তৈয়বা হতে বিদায় গ্রহণ করে যথা সময় মক্কা - মোয়াজ্জেমায় পদার্পন করলে মক্কার মুসলমানগণ, বিশেষ করে সাহাবায়েকেরামগণ হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়লেন। তিনি তাদের নিকট কুফাবাসিদের আমন্ত্রনের কথা এবং তথায় যাওয়ার স্বীয় আভিপ্রায় ব্যক্ত করলে সাহাবায়েকেরাম অসম্মতি প্রকাশ করলেন। এদিকে কুফাবাসিদের শতশত আমন্ত্রনপত্র ক্রমাগত তাঁর নিকট পৌঁছুতে থাকলে তিনি তথায় যাত্রার সিদ্ধান্ত নিলে সাহাবায়েকেরাম হযরত ঈমাম মোসলেম হানফি (রাঃ) কে কুফায় পাঠিয়ে তথাকার সত্যিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কে পরামর্শ দিলে হযরত তা-ই করলেন। হযরত ঈমাম মোসলেম হানফি (রাঃ) তথায় পৌঁছুলে কুফাবাসিগন তাঁকে আজীমুসশা'ন সম্বর্ধনা প্রদান করলো। শতশত কুফাবাসি তাঁর নিকট বয়াত গ্রহণ করতে লাগলো। শাসনকর্তা নোমান-বিন-বশিরও এর কোনও প্রকার বিরোধিতা করেনি। ঈমাম মোসলেম হানফি (রাঃ) তাই সরল বিশ্বাসে তথাকার পরিস্থিতি হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ)'র তথায় আগমন সম্পুর্নরুপে অনুকুল মনে করে হযরতকে কুফায় আগমনের জন্য সুপারিশ করে পত্র পাঠালে এবং হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কুফায় যাত্রার প্রস্তুতি নিতে থাকলে মক্কা - মোয়াজ্জেমার সাহাবায়েকেরাম বিশেষ করে হযরত আব্দুল্লাহ-বিন-উমর (রাঃ), হযরত উমর-বিন-আস (রাঃ), হযরত আব্দুল্লাহ বিন জায়ের (রাঃ) প্রমুখ সাহাবায়েকেরাম কুফাবাসিদের বদচরিত্র ও বেওফাদারি সম্পর্কে হযরতকে পুনরায় স্মরন করিয়ে তথায় যেতে ঘোর আপত্তি জানালে তিনি বললেন, "আমি সবই অবগত, অর্থাৎ শুধু কুফাবাসিদের চরিত্রই নয় আরও অনেক বিষয়ে আমি অবগত।" কিন্তু এই যাত্রার পেছনে আল্লাহপাকের এক বিশেষ রা'জ বা নিগূড় রহস্য নিহিত আছে।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কুফার অন্তর্গত ফোরাতকুলে কারবালা প্রান্তরে কি ঘটবে তা পূর্ব হতেই অবগত ছিলেন। মক্কা মোয়াজ্জেমায় যাত্রার উদ্দেশ্যে মদিনা তৈয়বা হতে বিদায় নেয়ার পূর্ব রজনীতে তিনি যখন বিচ্ছেদ বেদনায় ভারাক্রান্ত হৃদয়ে রাসুলে খোদা (দঃ) এর রওজা আকদাছকে জড়িয়ে ধরে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিগলিত কন্ঠে আরজ করেছিলেন "হে নানাজান! আমি ঐ হোসাইন, যার জন্য বনের হরিণী নিজের বাচ্চা নিয়ে আসতো; আমি ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ)'র ঐ হৃদয়ের ধন যার দোলনা ফেরেশতারা দোলাতো। আমি ঐ শাহজাদা, যাকে আপনি স্বীয় স্কন্ধ মোবারকে সাওয়ার করাতেন।" এমনিভাবে আরজ করতে করতে এক সময় যখন তাঁর চোখে তন্দ্রা নেমে এলো, তিনি দেখতে পেলেন, হুজুর আকরাম (সাঃ) নূর দীপ্ত (জালওয়াগার) অবস্থায় তাঁর মাথা মোবারক স্বীয় কোল-মোবারকে নিয়ে ফরমাচ্ছেন - "হে আমার হৃদয়ের ধন হোসাইন, অতিশিঘ্রই তুমি আমার সাথে মিলিত হবে। আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি ক্ষুধা-পিপাসায় ক্লান্তদেহে আমার কাছে ফিরে এসেছো। তোমার এই নূরীদেহ কারবালার মাটিতে দ্বিখণ্ডিত হবে। ঐ মাটি তোমার হলকমের রক্তে রঙ্গীন হবে। বৎস হোসাইন সবর এখতেয়ার করো।" তন্দ্রা কেটে গেলে তিনি তাঁর আম্মাজান ক্বেবলা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ)'র রওজা পাকে উপস্থিত হয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে, বিগলিত কণ্ঠে যখন আরজ করলেন - "আম্মাজান আপনার প্রানাধিক প্রিয় হোসাইন কারবালা প্রান্তরে হলকম কাটাতে চলেছে, তাই আপনার নিকট বিদায় নিতে এসেছি।" মাযার পাক হতে আওয়াজ এলো - "আমি তোমার অপেক্ষায় আছি"। এতদ্বভিন্ন তাঁর শাহাদাত বরণ তথা সাইয়েদোশশোহাদার মর্যাদা লাভের সংবাদ তাঁর শৈশবেই জিবরাঈল (আঃ) হযরত রাসুলে খোদা (দঃ) কে প্রদান করেছিলেন। যা হযরত উম্মে সালমা (রাঃ), হযরত আলী আল মর্তোজা (কঃ), হযরত ফাতেমতুজ্জোহরা (রাঃ) এবং অনেক বিশিষ্ট সাহাবায়েকেরাম এমনকি তিনি নিজেও অবগত ছিলেন।
হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) সপরিবারে অল্প সংখ্যক সদস্যের কাফেলা নিয়ে কুফা অভিমুখে রওনা হয়ে "মোকামে-শাকুকে" পৌঁছুলে হযরত ঈমাম মোসলেম (রাঃ)'র শাহাদাত বরণের দুঃসংবাদ পেয়ে বললেন "ইন্নালিল্লাহে ওয়াইন্না এলাইহে রাজেউন" এবং কাফেলার সদস্যগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "তোমাদের মধ্যে যারা ফিরে যেতে চাও যেতে পার, আমি সন্তুষ্টচিত্তে তোমাদেরকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছি।" কেউই যখন হযরতকে ছেড়ে ফিরে যেতে রাজী হলেন না, তখন তিনি কাফেলাসহ অগ্রসর হয়ে পথ অতিক্রম করতে করতে ২রা মহররম এক স্থানে পৌঁছুলে তাঁর ঘোড়া হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো। অনেক চেষ্টা করেও ঘোড়াকে যখন এক কদমও অগ্রসর করানো গেলো না তখন হযরত জিজ্ঞেস করলেন, "এটা কোন স্থান ?" কাফেলার সাথীগণ আরজ করলেন - "একে মারহীয়া বলে"। তিনি আবার বললেন - "এর আর কোনও নাম আছে কি ?" আরজ করা হলো, "একে কারবালাও বলা হয়"। হযরত উচ্চারণ করলেন "আল্লাহু-আকবর", বললেন- "কারবালার মাটি ? এইতো ঐ স্থান যার সম্বন্ধে আমার নানাজান ক্বেবলা রাসুল-এ-খোদা (দঃ) বলেছিলেন।" এবং তাঁবু ফেলার নির্দেশ দিলেন।
৩রা মহররম সূর্যোদয়ের পরপরই আব্দুল্লাহ-ইবনে-সাদ এজিদের বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনী নিয়ে কারবালা প্রান্তরে উপস্থিত হলো, হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) তাকে ডেকে এনে অনেক সদুপদেশ দিলেন, আখেরাতের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে অবহিত করলেন। কিন্তু পুরষ্কারের লোভ, পদোন্নতির লালসার কারনে তার হৃদয় বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না। হযরত তিনটি প্রস্তাব দিলেন যথাঃ
"আমাকে সেরহেদাত যেতে দাও; শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য এজিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার্থে তার নিকট যেতে দাও; অথবা আমাকে হেজ্বাজে ফিরে যেতে দাও।" পাষাণ হৃদয় ইবনে সাদ তা মেনে নিলো না। সময় অতিবাহিত হতে লাগলো। এক সময় ফোরাতের পানিও রাসুলে খোদা (দঃ)'র নূর এ নাজার হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) এর পরিবার এবং তাঁর সাথীগণের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো।
৯ই মহররম আব্দুল্লাহ ইবনে সাদ এজিদের পক্ষে যুদ্ধের ঘোষণা দিলে হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) একরাত্রের সময় চেয়ে নিলেন, বললেন -"আগামীকাল দেখা যাবে"। রাত্রি নেমে এলো, হযরত সাথীদের সবাইকে ডেকে বললেন - "রাত্র হয়ে গেছে আল্লাহ তোমাদের হেফাজত করুন, আমি সন্তুষ্ট চিত্তে অনুমতি দিচ্ছি তোমরা একেকটি উট নিয়ে নিজ নিজ শহরে বা গ্রামে চলে যাও, যেন আল্লাহ এই মুসিবত আসান করেন। কেননা রাত পোহালে ইবনে সা'দের লোকেরা কেবল আমাকেই তালাশ করবে, আর কাউকেই করবে না।" হযরতকে একা ফেলে কেউই যেতে রাজী হলেন না। সকল অনুসারিদের তাঁর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, সত্যের জন্য আত্মত্যাগের তাদের এহেন দৃঢ়মনোভাবের পরিচয় পেয়ে তিনি উৎসাহিত হলেন এবং স্বীয় তলোয়ার বের করে পরিষ্কার করতে লাগলেন। সারারাত্রি যেকরে-এলাহীতে মশগুল থাকাকালীন ক্ষনিকের জন্য তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে দেখলেন, সরওয়ারে কায়েনাত রাসুলে খোদা (সাঃ) কতিপয় নুরদ্দীপ্ত সুরতসহ তথায় তশরীফ এনেছেন এবং শাহজাদা হোসাইন (আঃ) কে স্বীয় কোল মোবারকে নিয়ে বলতে লাগলেন - "হে আমার নূর এ নাজার, হে আমার হৃদয়ের ধন, চেয়ে দেখো এই সকল পবিত্র আরওয়াহ তোমারই খেদমতে হাজির। আগামীকালের রাত্রের আহার তুমি আমারই সাথে করবে। বেহেশত তোমারই প্রতিক্ষায় আছে। বেহেশতের হুরগণ তোমারি পথপানে চেয়ে আছে।" তন্দ্রা কেটে গেলে তিনি এই সংবাদ তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিকট ব্যক্ত করলে সকলেই পেরেশান হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তাঁবুর মধ্যে রোনাজারী আরম্ভ হলো, সে এক করুন দৃশ্য। হযরতের ভগ্নি হযরত জয়নব (রাঃ) কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ হয়ে পড়লেন।
হুজুর পাক (সাঃ) ফরমানঃ
"মোহাম্মদের আল বা পরিবারবর্গ মারেফত দোযখ হতে পরিত্রাণ লাভের অবলম্বন। মোহাম্মদের আল এর প্রতি ভালোবাসা পুল-সিরাত পার হওয়ার সনদ এবং মোহাম্মদের আল এর বেলায়েত আজাব হতে আমান স্বরূপ।"
হুজুর (সাঃ) ফরমানঃ
"তোমরা আমাকে ভালবাসো আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করার জন্য, আর আমার আহলে বায়েতকে ভালবাসো আমার ভালোবাসা লাভ করার জন্য।"
হুজুর (সাঃ) ফরমানঃ
"হে মানুষ, আমি তোমাদের জন্য ঐ (মুল্যবান) বস্তু রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তা' দৃঢ় ভাবে ধারণ কর তবে কখনও পথভ্রষ্ট বা গোমরাহ হবে না। তা' হলো আল্লাহর কিতাব ও আমার ইতরাত (আপনজন), আমার আহলে বায়েত।"
হুজুর (সাঃ) আরো ফরমানঃ
"আমার আহলে বায়েত হলো নূহ এর নৌকা স্বরূপ, যারা এতে আরোহণ করেছে (অর্থাৎ, এতে নিজেকে সমর্পন করেছে) তারা পরিত্রাণ লাভ করেছে। আর যারা এর বিরোধিতা করেছে (অর্থাৎ, আনুগত্য স্বীকার করে নাই) তারা নিমজ্জিত (অর্থাৎ, ধ্বংস প্রাপ্ত) হয়েছে।"
কিন্তু কি মর্মন্তুদ যে, অর্থের লোভে, প্রাচুর্য্যের লোভে, ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দিয়ে পরকালকে ভুলে গিয়ে উম্মতে মোহাম্মদীর মুখোশ পরে আবু সুফিয়ানের দৌহিত্র মাবিয়ার পুত্র এজিদের নির্দেশে তার অনুসারীগণ কারবালা প্রান্তরে এই আহলে বায়েতগণের অন্যতম, নূর - এ - নাযরে রাসুলে খোদা (সাঃ), জীগার গোশায়ে ফাতেমা (রাঃ) হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ), তাঁর পরিবারবর্গ ও সহচরবৃন্দের উপর নির্মম অত্যাচার চালাতে, নিষ্ঠুরভাবে হযরত আলী আকবর (রাঃ), দুগ্ধপোষ্য শিশু হযরত আলী আসগর (রাঃ) প্রমুখ আওলাদে হোসাইনকে এমনকি হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কেও হত্যা করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করেনি। হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) আহলে-বায়েত সম্পর্কে আল্লাহ ও রাসুলের বাণী স্মরণ করিয়া দেয়া সত্ত্বেও এজিদের অনুসারি এই নর পিশাচদের হৃদয়ে বিন্দুমাত্র দাগ কাটেনি। ক্ষমতা লোলুপ মদ্যপায়ী চরিত্রহীন এজিদ ইবনে মাবিয়ার হীন চক্রান্ত এবং বুজদেল - বেঈমান কুফাবাসীদের বেঈমানির ফলশ্রুতি স্বরূপ কারবালা প্রান্তরে ঈমাম পরিবারকে কেন্দ্র করে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল তারই প্রেক্ষাপটে রচিত হৃদয় বিদারক করুন ইতিহাসের কিয়দাংশ সংক্ষেপে এখানে তুলে ধরা হলো।
কুফাবাসীদের আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে তথায় যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) ২৭শে রজব মক্কা - মোয়াজ্জেমার উদ্দেশ্যে মদিনা তৈয়বা হতে বিদায় গ্রহণ করে যথা সময় মক্কা - মোয়াজ্জেমায় পদার্পন করলে মক্কার মুসলমানগণ, বিশেষ করে সাহাবায়েকেরামগণ হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়লেন। তিনি তাদের নিকট কুফাবাসিদের আমন্ত্রনের কথা এবং তথায় যাওয়ার স্বীয় আভিপ্রায় ব্যক্ত করলে সাহাবায়েকেরাম অসম্মতি প্রকাশ করলেন। এদিকে কুফাবাসিদের শতশত আমন্ত্রনপত্র ক্রমাগত তাঁর নিকট পৌঁছুতে থাকলে তিনি তথায় যাত্রার সিদ্ধান্ত নিলে সাহাবায়েকেরাম হযরত ঈমাম মোসলেম হানফি (রাঃ) কে কুফায় পাঠিয়ে তথাকার সত্যিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কে পরামর্শ দিলে হযরত তা-ই করলেন। হযরত ঈমাম মোসলেম হানফি (রাঃ) তথায় পৌঁছুলে কুফাবাসিগন তাঁকে আজীমুসশা'ন সম্বর্ধনা প্রদান করলো। শতশত কুফাবাসি তাঁর নিকট বয়াত গ্রহণ করতে লাগলো। শাসনকর্তা নোমান-বিন-বশিরও এর কোনও প্রকার বিরোধিতা করেনি। ঈমাম মোসলেম হানফি (রাঃ) তাই সরল বিশ্বাসে তথাকার পরিস্থিতি হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ)'র তথায় আগমন সম্পুর্নরুপে অনুকুল মনে করে হযরতকে কুফায় আগমনের জন্য সুপারিশ করে পত্র পাঠালে এবং হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কুফায় যাত্রার প্রস্তুতি নিতে থাকলে মক্কা - মোয়াজ্জেমার সাহাবায়েকেরাম বিশেষ করে হযরত আব্দুল্লাহ-বিন-উমর (রাঃ), হযরত উমর-বিন-আস (রাঃ), হযরত আব্দুল্লাহ বিন জায়ের (রাঃ) প্রমুখ সাহাবায়েকেরাম কুফাবাসিদের বদচরিত্র ও বেওফাদারি সম্পর্কে হযরতকে পুনরায় স্মরন করিয়ে তথায় যেতে ঘোর আপত্তি জানালে তিনি বললেন, "আমি সবই অবগত, অর্থাৎ শুধু কুফাবাসিদের চরিত্রই নয় আরও অনেক বিষয়ে আমি অবগত।" কিন্তু এই যাত্রার পেছনে আল্লাহপাকের এক বিশেষ রা'জ বা নিগূড় রহস্য নিহিত আছে।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) কুফার অন্তর্গত ফোরাতকুলে কারবালা প্রান্তরে কি ঘটবে তা পূর্ব হতেই অবগত ছিলেন। মক্কা মোয়াজ্জেমায় যাত্রার উদ্দেশ্যে মদিনা তৈয়বা হতে বিদায় নেয়ার পূর্ব রজনীতে তিনি যখন বিচ্ছেদ বেদনায় ভারাক্রান্ত হৃদয়ে রাসুলে খোদা (দঃ) এর রওজা আকদাছকে জড়িয়ে ধরে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিগলিত কন্ঠে আরজ করেছিলেন "হে নানাজান! আমি ঐ হোসাইন, যার জন্য বনের হরিণী নিজের বাচ্চা নিয়ে আসতো; আমি ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ)'র ঐ হৃদয়ের ধন যার দোলনা ফেরেশতারা দোলাতো। আমি ঐ শাহজাদা, যাকে আপনি স্বীয় স্কন্ধ মোবারকে সাওয়ার করাতেন।" এমনিভাবে আরজ করতে করতে এক সময় যখন তাঁর চোখে তন্দ্রা নেমে এলো, তিনি দেখতে পেলেন, হুজুর আকরাম (সাঃ) নূর দীপ্ত (জালওয়াগার) অবস্থায় তাঁর মাথা মোবারক স্বীয় কোল-মোবারকে নিয়ে ফরমাচ্ছেন - "হে আমার হৃদয়ের ধন হোসাইন, অতিশিঘ্রই তুমি আমার সাথে মিলিত হবে। আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি ক্ষুধা-পিপাসায় ক্লান্তদেহে আমার কাছে ফিরে এসেছো। তোমার এই নূরীদেহ কারবালার মাটিতে দ্বিখণ্ডিত হবে। ঐ মাটি তোমার হলকমের রক্তে রঙ্গীন হবে। বৎস হোসাইন সবর এখতেয়ার করো।" তন্দ্রা কেটে গেলে তিনি তাঁর আম্মাজান ক্বেবলা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ)'র রওজা পাকে উপস্থিত হয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে, বিগলিত কণ্ঠে যখন আরজ করলেন - "আম্মাজান আপনার প্রানাধিক প্রিয় হোসাইন কারবালা প্রান্তরে হলকম কাটাতে চলেছে, তাই আপনার নিকট বিদায় নিতে এসেছি।" মাযার পাক হতে আওয়াজ এলো - "আমি তোমার অপেক্ষায় আছি"। এতদ্বভিন্ন তাঁর শাহাদাত বরণ তথা সাইয়েদোশশোহাদার মর্যাদা লাভের সংবাদ তাঁর শৈশবেই জিবরাঈল (আঃ) হযরত রাসুলে খোদা (দঃ) কে প্রদান করেছিলেন। যা হযরত উম্মে সালমা (রাঃ), হযরত আলী আল মর্তোজা (কঃ), হযরত ফাতেমতুজ্জোহরা (রাঃ) এবং অনেক বিশিষ্ট সাহাবায়েকেরাম এমনকি তিনি নিজেও অবগত ছিলেন।
হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) সপরিবারে অল্প সংখ্যক সদস্যের কাফেলা নিয়ে কুফা অভিমুখে রওনা হয়ে "মোকামে-শাকুকে" পৌঁছুলে হযরত ঈমাম মোসলেম (রাঃ)'র শাহাদাত বরণের দুঃসংবাদ পেয়ে বললেন "ইন্নালিল্লাহে ওয়াইন্না এলাইহে রাজেউন" এবং কাফেলার সদস্যগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "তোমাদের মধ্যে যারা ফিরে যেতে চাও যেতে পার, আমি সন্তুষ্টচিত্তে তোমাদেরকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছি।" কেউই যখন হযরতকে ছেড়ে ফিরে যেতে রাজী হলেন না, তখন তিনি কাফেলাসহ অগ্রসর হয়ে পথ অতিক্রম করতে করতে ২রা মহররম এক স্থানে পৌঁছুলে তাঁর ঘোড়া হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো। অনেক চেষ্টা করেও ঘোড়াকে যখন এক কদমও অগ্রসর করানো গেলো না তখন হযরত জিজ্ঞেস করলেন, "এটা কোন স্থান ?" কাফেলার সাথীগণ আরজ করলেন - "একে মারহীয়া বলে"। তিনি আবার বললেন - "এর আর কোনও নাম আছে কি ?" আরজ করা হলো, "একে কারবালাও বলা হয়"। হযরত উচ্চারণ করলেন "আল্লাহু-আকবর", বললেন- "কারবালার মাটি ? এইতো ঐ স্থান যার সম্বন্ধে আমার নানাজান ক্বেবলা রাসুল-এ-খোদা (দঃ) বলেছিলেন।" এবং তাঁবু ফেলার নির্দেশ দিলেন।
৩রা মহররম সূর্যোদয়ের পরপরই আব্দুল্লাহ-ইবনে-সাদ এজিদের বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনী নিয়ে কারবালা প্রান্তরে উপস্থিত হলো, হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) তাকে ডেকে এনে অনেক সদুপদেশ দিলেন, আখেরাতের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে অবহিত করলেন। কিন্তু পুরষ্কারের লোভ, পদোন্নতির লালসার কারনে তার হৃদয় বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না। হযরত তিনটি প্রস্তাব দিলেন যথাঃ
"আমাকে সেরহেদাত যেতে দাও; শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য এজিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার্থে তার নিকট যেতে দাও; অথবা আমাকে হেজ্বাজে ফিরে যেতে দাও।" পাষাণ হৃদয় ইবনে সাদ তা মেনে নিলো না। সময় অতিবাহিত হতে লাগলো। এক সময় ফোরাতের পানিও রাসুলে খোদা (দঃ)'র নূর এ নাজার হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) এর পরিবার এবং তাঁর সাথীগণের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো।
৯ই মহররম আব্দুল্লাহ ইবনে সাদ এজিদের পক্ষে যুদ্ধের ঘোষণা দিলে হযরত ঈমাম হোসাইন (আঃ) একরাত্রের সময় চেয়ে নিলেন, বললেন -"আগামীকাল দেখা যাবে"। রাত্রি নেমে এলো, হযরত সাথীদের সবাইকে ডেকে বললেন - "রাত্র হয়ে গেছে আল্লাহ তোমাদের হেফাজত করুন, আমি সন্তুষ্ট চিত্তে অনুমতি দিচ্ছি তোমরা একেকটি উট নিয়ে নিজ নিজ শহরে বা গ্রামে চলে যাও, যেন আল্লাহ এই মুসিবত আসান করেন। কেননা রাত পোহালে ইবনে সা'দের লোকেরা কেবল আমাকেই তালাশ করবে, আর কাউকেই করবে না।" হযরতকে একা ফেলে কেউই যেতে রাজী হলেন না। সকল অনুসারিদের তাঁর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, সত্যের জন্য আত্মত্যাগের তাদের এহেন দৃঢ়মনোভাবের পরিচয় পেয়ে তিনি উৎসাহিত হলেন এবং স্বীয় তলোয়ার বের করে পরিষ্কার করতে লাগলেন। সারারাত্রি যেকরে-এলাহীতে মশগুল থাকাকালীন ক্ষনিকের জন্য তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে দেখলেন, সরওয়ারে কায়েনাত রাসুলে খোদা (সাঃ) কতিপয় নুরদ্দীপ্ত সুরতসহ তথায় তশরীফ এনেছেন এবং শাহজাদা হোসাইন (আঃ) কে স্বীয় কোল মোবারকে নিয়ে বলতে লাগলেন - "হে আমার নূর এ নাজার, হে আমার হৃদয়ের ধন, চেয়ে দেখো এই সকল পবিত্র আরওয়াহ তোমারই খেদমতে হাজির। আগামীকালের রাত্রের আহার তুমি আমারই সাথে করবে। বেহেশত তোমারই প্রতিক্ষায় আছে। বেহেশতের হুরগণ তোমারি পথপানে চেয়ে আছে।" তন্দ্রা কেটে গেলে তিনি এই সংবাদ তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিকট ব্যক্ত করলে সকলেই পেরেশান হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তাঁবুর মধ্যে রোনাজারী আরম্ভ হলো, সে এক করুন দৃশ্য। হযরতের ভগ্নি হযরত জয়নব (রাঃ) কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ হয়ে পড়লেন।
চলবে...
লেখকঃ এস জি এম চিশতী