সাম্প্রতিক পোস্টসমূহ
loading..
- Back to Home »
- আকিদা , এস জি এম চিশতী , শরীয়ত »
- # হযরত নবী করিম (সাঃ)- এর শানপাক ও মর্যাদা
Posted by :
SIRAAJAM MUNIRA
Monday, June 30, 2014
হযরত নবী করিম (সাঃ)- এর শানপাক ও মর্যাদা
হযরত নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সমস্ত মাখলুকাত হতে ‘শ্রেষ্ঠ’ জানা এবং সর্বাধিক সম্মান করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য একান্ত কর্তব্য, না করা হারাম। কেননা তিনি সমস্ত মাখলুকাতের জন্য একমাত্র রহমত স্বরূপ প্রেরিত। এরশাদ হচ্ছেঃ
“আমি আপনাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য একমাত্র রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।” (সূরা
- আল্-আম্বিয়া : আয়াত
- ১০৭)।
আল্লাহ্পাক একমাত্র তাঁকেই স্বীয় সেফাত সমূহের অন্যতম সেফাত ‘রাউফ’ ও
‘রহিম’ দ্বারা ভূষিত করেছেন, যা’ অন্য কোন নবীকে করেন নাই। এরশাদ হচ্ছেঃ
“তোমাদের যা’ বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী। উপরন্ত মোমেনদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু।” (সূরা
- আত্-তাওবাহ : আয়াত
- ১২৮)।
তিনি মানুষরূপি বটে কিন্তু আমাদের মতো মানুষ নন। এরশাদ হচ্ছেঃ
“(হে নবী) আপনি বলুন অবশ্যই আমি বাহ্যত তোমাদের মত মানুষ বটে কিন্তু আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়।”(সূরা
- আল্-কাহাফ : আয়াত
- ১১০)। এই আয়াতে কারিমা নাজেলের দু’টি উদ্দেশ্য পরিলক্ষিত হয়। প্রথমত, আল্লাহ্পাক কর্তৃক তাঁকে তাঁর স্বভাবসুলভ বিনয় ও নম্রতা প্রকাশের অনুমতি প্রদান। দ্বিতীয়ত, পূর্বেকার কাফেরগণ তাদের সময়কার নবীগণকে উদ্দেশ্য করে বলত –
“তারা বলত,
আপনারাতো আমাদের মত একজন মানুষ বই কিছু না।”(সূরা
- ইয়াসিন : আয়াত - ১৫)। তদ্রুপ হযরত নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে লক্ষ্য করে মক্কার কাফেরগণও বলত
“মোহাম্মদ তো আব্দুল্লাহর পুত্র, আমাদের মতন একজন মানুষ, সে নবী হল কী করে?” এরই প্রতিবাদে আল্লাহ্ পাক তাঁকে বলার অনুমতি প্রদান করে বলছেন, “হে রাসূল! আপনি বলুন যদিওবা আমার বাহ্যিক সুরত তোমাদের মত কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি তোমাদের মত মানুষ নই। কেননা, আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয় যা’
তোমাদের প্রতি হয় না।”
তিনি নিজেও ফরমান -
“আমি তোমাদের কাহার মত নই, আমি আমার প্রভুর সাথে রাত্রযাপন করি। তিনি আমার পানাহার প্রদান করে থাকেন।” (বুখারী : ১ম খন্ড - ২৬২ পৃষ্ঠা / মুসলিম : ৩৫১ পৃষ্ঠা)
তিনি আমাদের মত মাটির তৈরী নন। তিনি আল্লাহ্ পাকের নূরের তৈরী এবং সৃষ্টির উৎস বা মূল। হযরত নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমানঃ
# হাদীস নং- ১
“আমি আল্লাহ্র নূর হতে এবং সমস্ত সৃষ্টি আমার নূর হতে”। (আব্দুর রাজ্জাক কর্তৃক মাওয়াহেবে লাদুন্নীতে হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাঃ হতে বর্ণিত / মাদারেজুন্ নবুওত : ২য় খন্ড)
# হাদীস নং- ২
ইমাম আব্দুর রাজ্জাক তাঁর সনদ ও সূত্র পরম্পরায় বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। হযরত জাবের (রাঃ) বলেন - আমি আরজ করলাম, হে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনার উপর আমার পিতা-মাতা কোরবান আল্লাহ্ তায়ালা সর্বপ্রথম কোন বস্তুটি সৃষ্টি করেছেন ? উত্তরে হুজুর পাক (সাঃ)
বললেন - “হে জাবের, আল্লাহ্ তায়ালা সর্ব প্রথম সমস্ত বস্তুর পূর্বে আপন নূর হতে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন, তারপর আল্লাহ্ তায়ালার ইচ্ছানুযায়ী ঐ নূর পরিভ্রমণ করতে থাকে। ঐ সময় না ছিল লাওহে-মাহফুজ, না ছিল কলম,
না ছিল বেহেস্ত, না ছিল দোজখ, না ছিল ফেরেস্তা, না ছিল আকাশ, না ছিল পৃথিবী না ছিল জ্বীন, না ছিল মানব জাতি। অতঃপর যখন আল্লাহ্ তায়ালা অন্যান্য বস্তু সৃষ্টি করতে মনস্ত করেন তখন ঐ নূরকে চারটি (৪) ভাগে বিভক্ত করেন। প্রথম ভাগ হতে কলম, দ্বিতীয় ভাগ হতে লাওহে মাহফুজ এবং তৃতীয় ভাগ হতে আরশ সৃষ্টি করেন। অবশিষ্ট এক (১ ভাগ) ভাগকে আবার ৪টি ভাগে বিভক্ত করে,
প্রথম (১ম) ভাগ হতে আরশ বহনকারী ফেরেস্তা, দ্বিতীয় (২য়)
ভাগ হতে কুরছি এবং তৃতীয় (৩য়) ভাগ হতে অন্যান্য ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন। অবশিষ্ট এক
(১ ভাগ) ভাগকে আবার ৪ ভাগে বিভক্ত করে প্রথম (১ম) ভাগ হতে আকাশ, দ্বিতীয় ভাগ হতে পৃথিবী এবং তৃতীয় ভাগ হতে বেহেস্ত ও দোজখ সৃষ্টি করেন। ..... শেষ পর্যন্ত। (আল্লামা আব্দুর রাজ্জাক (রঃ)
এর “মোসান্নেফ আব্দুর রাজ্জাক”, ইমাম কুসতুলানী (রঃ)
এর “মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া”।) ‘উল্লেখ্য যে,
আল্লামা আব্দুর রাজ্জাক হযরত ইমাম বোখারী (রঃ)’র ওস্তাদের ওস্তাদ।’
কোরআনে মাজীদে এরশাদ হচ্ছেঃ
“আল্লাহ্র নিকট হতে এসেছে ‘নূর’ এবং সুনির্দ্দিষ্ট ‘কিতাব’।” (সূরা-
আল্-মা-ইদাহ
: আয়াত - ১৫)। এখানে নূর হলেন
“হযরত নবী করিম
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)” এবং সুনির্দ্দিষ্ট কিতাব হল
“কোরআন”।
“সকল মুমিনই পরস্পর পরস্পরের ভাই”। (সূরা
- আল-হুজরাত : আয়াত
- ১০)। এই আয়াতে করিমার নিরীখে যদি হযরত নবী করিম
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমাদের ভাই বলতে চেষ্টা করি,
তবে তো আল্লাহ্পাককেও আমাদের ভাই বলতে হয়।
(নাউযুবিল্লাহ)
কারণ আল্লাহ্পাক এরশাদ করেনঃ
“তিনি (আল্লাহ্পাক) বাদশাহ্, দোষত্রুটিমুক্ত, শান্তিদাতা ও মুমিন”। (সূরা
- আল-হাশর : আয়াত
- ২৩)।
প্রকৃত পক্ষে হযরত নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই
‘ঈমান’ বা ঈমানের ভিত্তি আর আল্লাহ্ হলেন ঈমানের মুরাদ। ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলে মোমিন, এমনকি মুসলমানও হওয়া যায় না,
যতক্ষণ না ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্’ বলা হয়। তাঁর প্রতি ঈমান আনাই হল মোমিন হওয়ার শর্ত। তাই উল্লিখিত আয়াত নবী করিম হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।